অতিরিক্ত প্রবাহ রোধে বৈদ্যুতিক ফিউজ

প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে বেশিরভাগ সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, অথবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্কিটটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আমরা অনেক সময় বলি, “বাল্ব ফিউজ হয়ে গেছে” কিংবা “তার কেটে গেছে” ইত্যাদি। আসলে মাত্রার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে সার্কিট আর সেটিকে ধরে রাখতে পারে না যার ফলশ্রুতিতে কপার ধাতুর তৈরী এ ফিউজ তারগুলো ছিঁড়ে যায় কিংবা আর কাজ করে না।

বাড়িতে তড়িৎ বর্তনীর লাইনে নিরাপত্তার জন্য কম গলনাঙ্ক বিশিষ্ট কোনোও সংকর ধাতুর তৈরি এবং বেশি রোধের যে সরু তার শ্রেণি সমবায়ে ( Series Connection) মেইন লাইনের তারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এই তারের মধ্যে দিয়ে নির্দিষ্ট সীমার বেশি তড়িৎ প্রবাহিত হলে উত্তপ্ত হয়ে নিজে থেকে গলে যায় এবং তড়িৎ বর্তনীকে ছিন্ন করে দেয়। এই ঘটনাটাকে বৈদ্যুতিক ফিউজ বলা হয়।   

সাধারণত টিন ও সিসার (সিসা 75% এবং নিকেল 25%) এক রকম সংকর ধাতুর তৈরি সরু তার ফিউজ হিসাবে ব্যবহৃত হয় । চীনামাটির ছোটো আবরণের মধ্যে ফিউজ তারকে রাখা হয় । ফিউজ তারকে স্ক্রু এর সাহায্যে আটকে নিয়ে আবরণটিকে মূল বর্তনীতে রাখা হোল্ডারের মধ্যে চেপে বসিয়ে দিয়ে বিদ্যুতের মেইন লাইনের সঙ্গে যুক্ত করা হয় ।

১৮৪৭ সালে ফ্রেঞ্চ পদার্থবিদ ব্রিগুয়েট (  Breguet ) ফিউজের ধারণা দেন। পরবর্তীতে ১৮৯০ সালে টমাস আলভা এডিসন ফিউজের একটি পরিপূর্ন কাঠামো প্রকাশ করেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফিউজটি বিশেষ ধরনের ধাতব তারের তৈরী হয় এবং প্লাগের মত সার্কিটে লাগানো থাকে। ব্যবহৃত ধাতব তারটি অধিক পরিমানে বিদ্যুৎ পরিবাহী হয় তবে গলনাঙ্ক থাকে খুবই কম। বিদ্যুৎ প্রবাহের মাত্রা যদি অতিরিক্ত হয়, অন্তত স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ হয়, তাহলে তারটি অনেকসময় গলে যায়। 

বাসা বাড়িতে মাঝে মাঝেই ফিউজের ঘটনা ঘটে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, প্রথমত, শর্ট সার্কিট এবং দ্বিতীয়ত একসাথে অনেকগুলো লাইন চালানো। অনেক সময় ইস্ত্রির লাইন লাগানোর পর হঠাৎ করে পুরো বাসার কারেন্ট চলে যায়, কিংবা কখনো কখনো ওভেন চালু করলে সব লাইট নিভে যায়। এরকম যত ঘটনা ঘটছে, সব কিছুই মূলত বৈদ্যুতিক ফিউজের কারণেই ঘটছে। 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন