অনেক দূরের গ্রহ জুপিটার

মঙ্গলগ্রহ, শনি বা প্লুটো নিয়ে আমরা হরহামেশাই কথা বলি। কিন্তু জুপিটার বা বৃহস্পতি গ্রহ নিয়ে কাউকে তেমন কথা বলতে দেখা যায় না। কেন? অথচ বৃহস্পতি আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ যার ভর পৃথিবীর চেয়ে ৩১৮ গুন বেশি।

বৃহস্পতি সৌরজগতের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং রহস্যময় একটি গ্রহ। এখানে এমন সব ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় যা পৃথিবীর আয়তন থেকেও বড়। জুপিটারের যে ৩টি চাঁদ রয়েছে ইউরোপা, ক্যালিস্টো ও জেনিমেড- এদের বিশাল বরফের নিচে তরল পানি থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। আর যেখানেই তরল পানি আছে সেখানেই রয়েছে জীবনের সম্ভাবনা।

 

কিন্তু এতকিছুর পর বৃহস্পতি গ্রহে বা এর চাঁদে তেমন কোন মহাকাশযান পাঠানো হয়নি। যেখানে মঙ্গল নিয়ে এতো জল্পনা-কল্পনা চলছে সেখানে বৃহস্পতিতে সর্বশেষ যানটি পাঠানো হয়েছিল ২০০৭ সালে।

জুপিটারে অতি অল্প সংখ্যক মহাকাশযান পাঠানোর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে দূরত্ব। পৃথিবী থেকে বৃহস্পতির দূরত্ব প্রায় ৫৮৮ থেকে ৯৬৮ মিলিয়ন কিলোমিটার (উপবৃত্তাকার কক্ষপথের কারণে এই দুই গ্রহের মধ্যবর্তী দূরত্ব ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকে)।

সর্বপ্রথম জুপিটারে মহাকাশযান পাঠানো হয়েছিল ১৯৭২ সালে। পাইওনিয়ার নামের এই মহাকাশযানের সময় লেগেছিল ৬৪০ দিন। এরপরে আরও বেশ কয়েকটি মহাকাশযান জুপিটারে প্রেরণ করা হয় যেগুলোর সময় লেগেছিল ৫৫০ থেকে ৬৫০ দিন। কিন্তু এগুলোর কোনটিই বৃহস্পতির কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারেনি।

কক্ষপথে প্রবেশ করার জন্য মহাকাশযানটিকে অনেক ধীরগতিতে যেতে হবে যেন এটি বৃহস্পতিকে অতিক্রম করে না ফেলে এবং ধীরে ধীরে কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারে। সর্বপ্রথম ১৯৮৯ সালে নাসার পাঠানো মহাকাশযান গ্যালিলিও বৃহস্পতির কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল যেটির পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ২,২৪২ দিন।

একইভাবে ২০১১ সালের ৫ আগস্ট নাসা ‘জুনো’ নামের আরেকটি মহাকাশযান বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছে যেটি এই বছরের ৪ জুলাই কক্ষপথে প্রবেশ করার কথা রয়েছে। অর্থাৎ এটির সময় লাগছে ১,৭৯৫ দিন।

তার মানে বৃহস্পতিকে পর্যবেক্ষণ করবে এমন আরেকটি মহাকাশযান আমরা পেতে যাচ্ছি। এছাড়াও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ২০২২ সালে ‘Jupiter Icy Moons Mission’ এর পরিকল্পনা রয়েছে, যেটি জায়গামত পৌঁছাতে ২০৩০ সাল হয়ে যাবে। বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপাকে পর্যবেক্ষণ করাই এটির মূল লক্ষ্য।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন