তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে হাতে লিখে যেকোনো দরকারি কাগজ-পত্র তৈরি করার রীতি খুব কমই দেখা যায় আজ। কম্পিউটারে খটাখট কি-বোর্ডে চাপ দিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা টাইপ করে নেয়া যায়, এরপর প্রিন্টার দিয়ে মুহূর্তেই ছাপানো যায়। কম্পিউটারের এই টাইপিং-এর জনক আসলে টাইপরাইটার। টাইপরাইটারের কি-বোর্ডের আদলে তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটারের কি-বোর্ড, আর এর আদলে আবার তৈরি হয়েছে স্মার্টফোনের কি-প্যাড। কম্পিউটারের কি-বোর্ডের দিকে তাকালেই দেখা যায় যে অক্ষরগুলো ক্রমানুসারে সাজানো নেই, বরং কেমন যেন এলোমেলোভাবে সাজানো আছে। দেখতে এলোমেলো মনে হলেও আসলে এই কি-বোর্ডের অক্ষরগুলোর একটি ধরণ আছে, কোন কারণ ছাড়া এদের এমন অদ্ভুতভাবে সাজানো হয়নি !
লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, কি-বোর্ডের প্রথম অক্ষরটি হল Q, এর পর যথাক্রমে W, E, R, T, Y এবং আরও অন্যান্য অক্ষর। কিন্তু এই প্রথম ছয়টি অক্ষরকে একত্রে উচ্চারণ করলে দাঁড়ায় “কোয়ার্টি” (QWERTY), আর এর থেকেই এই কি-বোর্ডের নামকরণ হয়েছে কোয়ার্টি কি-বোর্ড।
সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে টাইপরাইটার বাজারে আনে রেমিংটন এন্ড সন্স নামক কোম্পানি, আর এই টাইপরাইটারের কি-বোর্ড ছিল কোয়ার্টি কি-বোর্ড, এর ডিজাইনারের নাম ছিল ক্রিস্টোফার লাথাম শোলস। ১৮৭৮ সালের দিকে এই কি-বোর্ডের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে এমন অদ্ভুতভাবে কি-বোর্ডে অক্ষরগুলোকে সাজানোর দরকার কী ছিল! অবশ্যই দরকার ছিল। শোলস-এর আবিস্কার করা টাইপরাইটারে কিছু ত্রুটি ছিল, তার মধ্যে একটি হল যে বেশী দ্রুত কি-গুলো চাপলে টাইপরাইটার আটকে যেত। আর তাই শোলস কি-বোর্ডের নকশা এমনভাবে তৈরি করেন যাতে পাশাপাশি দু’টো অক্ষর বেশিবার চাপতে না হয়। তিনি তাঁর উদ্দেশ্যে সফল হয়েছিলেন, এই কি-বোর্ড মনে রাখতে অপারেটরদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।
১৮৭৩ সালে ক্রিস্টোফার ল্যাথাম শোলস টাইপরাইটার মেশিনে কোয়ার্টি কিবোর্ডের ব্যবহার করেন। বিভিন্ন কম্পিউটার কোড ব্যবহার করে এসব টাইপরাইটারকে নির্দেশ দেয়া হত এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাইপিং সম্পন্ন হতে থাকতো। কম্পিউটারের কিবোর্ডের ক্ষেত্রেও এটি স্ট্যান্ডার্ড লে-আউট হিসেবে ধরা হয়। কম্পিউটারে কোয়ার্টি কি-বোর্ড আসার পর প্রথম দিকে এতে বেশ কিছু অক্ষর কম ছিল। তবে Esc বাটনটি শুরু থেকেই এই কি-বোর্ডে সংযুক্ত আছে। এরপর ধীরে ধীরে Arrow, Insert, Delete. Home প্রভৃতি সংযুক্ত হয়। এছাড়া, অধিকাংশ কী-বোর্ডের শীর্ষে (F1-F12) পর্যন্ত ফাংশনাল কী থাকে এবং নিউমারিক কী-প্যাড কী-বোর্ডের সর্বডানে থাকে।