বৃষ্টির দিনে রংচঙে ছাতা মাথায় নিয়ে স্কুলে যেতে হয়তো অনেকেই পছন্দ করো। ছাতায় বৃষ্টির টুপটাপ ছন্দের শব্দ শুনতে কার না ভালো লাগে! কিন্তু এই টুপটাপ শব্দ যদি তোমার সাথে তোমার ছাতাও শুনতে পায়, তবে কেমন হবে?
বাংলায় একটা কথা আছে, “দেয়ালেরও কান আছে”, এর মানে হলো কেউ হয়তো কান পেতে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা শুনছে। এবার সেই সাথে আবিষ্কৃত হলো যে ছাতাও শুনতে পায়। তোমরা হয়তো ভাবছো মজা করছি, ছাতার আবার কান আছে নাকি যে শুনবে?
হ্যাঁ, এমন অসাধ্য সাধন করেছেন নেদারল্যান্ডের এক গবেষক। তিনি এমন এক ছাতা আবিস্কার করেছেন যার “কান” আছে, এই কান মূলত এক ধরণের সংবেদনশীল যন্ত্র (Sensor) যেটি বৃষ্টির শব্দ শুনে আবহাওয়া নির্ণয় করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা মতে, কতটুকু বৃষ্টি মেঘে জমলে তা মাটিতে নেমে আসে তা বের করা মুশকিল। আবার মেঘ এমন এক অদ্ভুত জিনিস যে হয়তো কোন এক জায়গায় বৃষ্টি নামালো, কিন্তু কয়েক হাত দূরেই খটখটে শুকনো। এ সকল কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে আবহাওয়া নির্ণয় সহজতর করতে এই ছাতা বেশ উপযোগী হতে পারে।
এই ছাতার আবিস্কারক রলফ হাট বলেন, “মেঘ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে বৃষ্টি নামতে পারে, কিন্তু কখন নামবে তা আপনি বলতে পারবেন না। কিন্তু এই ছাতার সাহায্যে আপনি বৃষ্টি কখন নেমে আসবে তা বের করতে পারবেন।”
বিজ্ঞানীরা বৃষ্টির পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করেন, তাতে কিছু দাগ থাকে যা দেখে বোঝা যায় যে কতসময় ধরে কতটুকু বৃষ্টি পড়লো। কিন্তু বৃষ্টি পরিমাপের জন্য সরাসরি পানি মাপা জরুরী নয়, বৃষ্টি পড়ার শব্দ থেকেও তা বের করা যায়। টিনের চালের ঝুমঝুম, কিংবা জানালার টুপটাপ শব্দ থেকেও তোমরা আন্দাজ করতে পারো যে কতটুকু বৃষ্টি পড়ছে।
এই ছাতায় ব্যবহৃত সেন্সরটি আসলে তৈরি করা হয়েছিল আফ্রিকাতে কম খরচে একটি আবহাওয়া কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষে।
হাট এবং তাঁর সহকর্মীরা যে সেন্সর আবিস্কার করেন, সেটি বৃষ্টির শব্দ ধারণ করে এবং তা থেকে বৃষ্টির পরিমাপ নির্ণয় করে। এই সেন্সরের ধারণকৃত তথ্যসমূহ দিয়ে কম্পিউটারের সাহায্যে সঠিকভাবে আবহাওয়া নির্ণয় সম্ভব।
সেন্সরটি আবিস্কারের পর হাট বুদ্ধি বের করেন যে এই সেন্সরটি ছাতায় লাগিয়ে দেখলে কেমন হয়! যেই ভাবা, সেই কাজ। তিনি তখন বাচ্চাদের প্রিয় কার্টুন “উয়িনি দ্যা পু”-এর ছবি সম্বলিত একটি ছাতায় তাঁর গবেষণা শুরু করেন।
ছাতার ভেতরে তিনি একটি হলুদ রঙ্গের চাকতি বসিয়ে দেন যেটি ব্লু-টুথের সাহায্যে স্মার্টফোনের সাথে সংযুক্ত থাকবে এবং বৃষ্টির শব্দ ধারণ করে সফটওয়্যারের সাহায্যে বৃষ্টি পরিমাপ করবে।
একবার ভেবে দেখো তো, বৃষ্টির দিনে স্কুলে যেতে যেতে ছাতা খুলেই তুমি বলে দিতে পারলে কতটুকু বৃষ্টি পড়ছে, কতক্ষণ ধরে পড়ছে, আর কতক্ষণ ধরে পড়তে পারে, তাহলে কেমন মজাই না হবে! বিজ্ঞানীরা আশা করছেন এই ছাতাটি সাধারণ মানুষের নাগালে আনলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবো।