আমেরিকান সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘টাইম ম্যাগাজিন’ ঘোষণা করেছে ২০১৪ সালের ‘পারসন অফ দ্য ইয়ার’। বর্ষসেরা ব্যক্তি হিসেবে তারা ঘোষণা করেছেন ‘ইবোলা যোদ্ধাদের’ নাম।
এ বছর ইবোলা ভাইরাস ডিজিস (EVD) পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হয় গিনি, লাইবেরিয়া আর সিয়েরা লিওন। এ বছর মার্চে গিনিতে প্রথম এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
ইবোলা খুবই মারাত্মক একটা রোগ যার কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এই রোগের কোন প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে যথাযথভাবে যত্ন করলে ও চিকিৎসা দিলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ রোগ ভালো হয়ে যায়। যে ইবোলা ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় সেটা বিভিন্ন প্রাণীর দ্বারা মানুষের মাঝে সংক্রমিত হতে পারে যেমনঃ বাদুরের দ্বারা। একজন মানুষের থেকে অন্য মানুষের দেহে এ ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে রক্ত, ঘাম বা অন্য কোন শারীরিক তরলের মাধ্যমে। প্রায় ১১ হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং এর মধ্যে ৬ হাজার জন মারা গিয়েছে।
বিভিন্ন দেশের সরকার এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংগঠন এ রোগে আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা দিচ্ছেন এবং এ ভাইরাসের বিস্তৃতি রোধে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে এ রোগ সম্পর্কে সচেতন করে তুলছেন এবং কীভাবে এ রোগের মোকাবেলা করা যায় সে ব্যাপারে জ্ঞান দিচ্ছেন। প্রচুর ডাক্তার এবং নার্স নিরলসভাবে ইবোলা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রচণ্ড সতর্ক থাকা সত্ত্বেও বেশ অনেকজন স্বাস্থ্যকর্মী এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। কিন্তু তারপরও তারা সাহসের সাথে অসুস্থদের সেবা দিয়ে গেছেন। ঝুঁকি আছে জেনেও তারা নির্ভীকভাবে রোগাক্রান্ত মানুষদের সাহায্য করে গেছেন। এই ইবোলা যোদ্ধাদেরকেই পারসন অফ দ্য ইয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।
বর্ষসেরা ব্যক্তির এ প্রতিযোগিতায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের আলীবাবা গ্রুপের ফাউন্ডার ও চেয়ারম্যান এবং চীনের বর্তমানে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জ্যাক মা।
১৯২৭ সাল থেকে টাইম ম্যাগাজিন তাদের পারসন অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার দিয়ে আসছে। প্রতি বছর কোন একজন ব্যক্তিকে বা একটি নির্দিষ্ট দলকে এ পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে, যে বা যারা কিনা পৃথিবীর কোন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন বা কোনভাবে পৃথিবীকে প্রভাবিত করেছেন। তবে শুধু ব্যক্তি বা দল নয়, এ পুরস্কারের এতো বছরের ইতিহাসে বেশ কিছু মজার বিজয়ী রয়েছে। আমাদের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করার ফলে ১৯৮২ সালে এ পুরস্কার দেয়া হয় কম্পিউটারকে। পৃথিবীর পরিবেশ আর একে রক্ষা করার বিষয়টা এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে যে ১৯৮৮ সালে খোদ পৃথিবীকেই দেয়া হয় পারসন অফ দ্য ইয়ারের খেতাব। ২০০৬ সালে পারসন অফ দ্য ইয়ার হয় ‘তুমি’ অর্থাৎ কিনা আমরা সকলেই। ২০১১ সালে এ পুরস্কার পায় ‘প্রতিবাদীরা’ কেননা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব প্রতিবাদীরা তাদের প্রতিবাদের মাধ্যমে অধিকার আদায় করেছেন।