১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ভেন্যুতে শুরু হয়েছে বিশ্ব সেরার লড়াই। এবার এতে অংশ নিচ্ছে ১৪টি দল। বিশ্বকাপের এই দলগুলোর ধারাবাহিক পরিচিতির ১৩ তম পর্বে আজ থাকছে প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৭৫-১৯৮৩ সাল পর্যন্ত যে দলটি ক্রিকেটে বিশ্বে আধিপত্য বজায় রেখেছিল রেখেছিল তার নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিকেটবিশ্বের অন্যান্য দলগুলোর মত এটি কোন একটি নির্দিষ্ট দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না। এটি একটি বহুজাতিক ক্রিকেট দল ।
পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ক্যারিবিয়ান সাগরের অববাহিকা এবং উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত দ্বীপ রাষ্ট্র সমূহের কিছু দেশ নিয়ে ১৮৯০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ১৯২৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল ৪র্থ দল হিসেবে টেস্ট স্ট্যাটাস পায়।
তবে ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগের শুরু হয় ১৯৭৫ সালে আইসিসি কর্তৃক আয়োজিত প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অন্যতম কিংবদন্তী অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের হাতে ছিল এক ঝাঁক তারকার সমাহার। এই দল নিয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে শাসন করেছেন পুরো ক্রিকেটকে।
১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালের প্রথম দুটি বিশ্বকাপ জিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৮৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারতের কাছে হেরে যায় বিশ্বকাপ জেতাটাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর থেকেই তাদের পতনের শুরু। পরের সাত বিশ্বকাপে ফাইনাল তো দূরের কথা সেমিফাইনাল খেলেছে তারা মাত্র একবার।
এরপরে ২০১২ সালের আইসিসি ওয়ার্ল্ডকাপ টোয়েন্টি ২০ জয় ছাড়া আর কোন বৈশ্বিক শিরোপা জিততে পারেনি তারা। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে চারবার। সর্বশেষ ২০১১ বিশ্বকাপে অবশ্য কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে লজ্জাজনক হার নিয়েই বিদায় নেয় ক্যারিবীয়রা।
এ পর্যন্ত তারা ১০টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে মোট খেলেছে ৬৪টি ম্যাচ, জিতেছে ৩৮টি, হেরেছে ২৫টি এবং ১ টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।
ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের বারবার দেনাপাওনা সংক্রান্ত ঝামেলার কারণেই মূলত তাদের এই অধঃপতন। গত বছর ক্যারিবীয় বোর্ড- খেলোয়াড় সংস্থা ও ক্রিকেটারদের ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব নিয়ে সর্বশেষ ভারত সফরে সিরিজের মাঝপথে দেশে ফিরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল।
এতে বিশ্বকাপের আগে দল থেকে ঝরে পড়েন অধিনায়ক ডোয়াইন ব্রাভো ও অভিজ্ঞ তারকা কাইরন পোলার্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়ক ব্রাভোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ২৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার জেসন হোল্ডার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক তিনি। নেতৃত্ব হাতে নেয়ার আগে ক্যারিয়ারে তার মাত্র ২১ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থান এখন আট হলেও তাদের দলে আছেন যেকোন মুহূর্তে খেলার গতিপথ পাল্টে দেয়ার মত কয়েকজন তারকা।
এই তালিকার প্রথমেই নাম আসবে ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইলের। ঝড়ের আরেকটি প্রতিশব্দ হতে পারে গেইল। অলরাউন্ডার মারলন স্যামুয়েলসও এক্ষেত্রে কম যান না। ব্যাটিংয়ে নির্ভরতা দিতে দলে আছেন লেন্ডল সিমন্স, ডোয়াইন স্মিথ, ড্যারেন ব্রাভো, দিনেশ রামদিনও ।
বল হাতে গতির ঝড় তুলতে পারেন কেমার রোচ আন্দ্রে রাসেল, ড্যারেন স্যামি, জেরম টেলররা!
তাদের সেরা বোলার স্পিনার সুনিল নারাইন অবৈধ বোলিং অ্যাকশন শুদ্ধ করার জন্য বিশ্বকাপ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তাই পেস বোলিংই তাদের প্রধান হাতিয়ার। অলরাউন্ডার ড্যারেন সামি ও আন্দ্রে রাসেল আছেন দলে। স্পিনার হিসেবে দলে আছেন সুলিমান বেন ও নিকিতা মিলার।
বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রস্তুতিটাও ভালো নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪-১এ সিরিজ হারে তারা। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে বিশাল ব্যবধানে হেরে নন টেস্টপ্লেয়িং স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৩ রান করেও মাত্র ৩ রানে জিতেছে তারা।
আগামীকাল ১৬ ফেব্রুয়ারী নিউজিল্যান্ডের স্যাক্সটন ওভাল (নেলসন)-এ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ খেলবে আয়ারল্যান্ড দলের বিপক্ষে। যারা পুল ‘বি’তে পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোকাবেলা করবে।
এক নজরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
বিশ্বকাপে অংশগ্রহন: ১৯৭৫ থেকে সবগুলো
সেরা সাফল্য: ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে পরপর দুইবার বিশ্বকাপ জয়
এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াড: জেসন হোল্ডার (অধিনায়ক), মারলন স্যামুয়েলস (সহঅধিনায়ক), সুলিমান বেন, ড্যারেন ব্রাভো, হোনাথন কার্টার, শেলডন কট্রেল, ক্রিস গেইল, নিকিতা মিলার, দিনেশ রামদিন (উইকেটরক্ষক), কেমার রোচ, আন্দ্রে রাসেল, ড্যারেন সামি, লেন্ডল সিমন্স, ডোয়াইন স্মিথ, জেরম টেলর।
নজর কাড়তে পারেন যারা: ক্রিস গেইল, মারলন স্যামুয়েলস।
বিশ্বকাপ মিস করছেন এমন তারকা: ডোয়াইন ব্রাভো, কাইরন পোলার্ড, সুনিল নারাইন।