১৭ শতকে ইংল্যান্ডে জন্ম হয় ক্রিকেট খেলার। পরবর্তীতে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোসহ অন্যান্য দেশগুলোতে এই খেলা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়েসহ আরও অনেকগুলো দেশ ক্রিকেটের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে এবং দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলছে। ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ এই তিন ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়ে থাকে।
১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মত ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। এই বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় বিজয়ীকে প্রদান করা হয় আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ট্রফি।
তবে আজকে আমরা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের যে ট্রফি দেখি সেটি শুরুতে এরকম ছিল না। ১৯৭৫, ১৯৭৯ এবং ১৯৮৩ এই তিন বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল লন্ডনে। এই তিন বিশ্বকাপ বিজয়ীকে দেয়া হয়েছিল প্রুডেনশিয়াল কাপ। প্রুডেন্সিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড কোং ব্রিটেনের একটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লিভ লয়েড এবং ১৯৮৩ সালে ভারতের কপিল দেব এই প্রুডেনশিয়াল কাপ উত্তোলন করেন।
সেসময় ক্রিকেট বিশকাপের ট্রফি ছিল মূলত স্পন্সরভিত্তিক। যারা টুর্নামেন্টের মূল স্পন্সর থাকতো তাদের নামেই ট্রফির নামকরণ করা হত। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ভারত ও পাকিস্তানে। এতে স্পন্সর ছিল রিলায়েন্স কোম্পানি এবং কাপের নাম হয় রিলায়েন্স কাপ। অস্ট্রেলিয়ার অ্যালান বর্ডার এই ট্রফি ঘরে তোলেন।
একইভাবে ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে আয়োজিত বিশ্বকাপের স্পন্সর অনুসারে কাপের নাম ছিল বেনসন এন্ড হেজেস কাপ এবং ১৯৯৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে আয়োজিত আসরে কাপের নাম ছিল উইলস কাপ। যথাক্রমে পাকিস্তান ও শ্রীলংকা কাপ দুইটি জিতে নেয়।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হওয়ার ২৪ বছর পর ১৯৯৯ সালে আইসিসি স্থায়ী ও নিজস্ব একটি কাপ তৈরি করে। এটির নাম দেয়া হয় আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ট্রফি। দুই মাস সময় নিয়ে ট্রফির নকশা ও নির্মাণ কাজ শেষ করে লন্ডনভিত্তিক গারার্ড এন্ড কোং।
বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বকাপ ট্রফিটি রৌপ্য ও সোনালী রঙের সমন্বয়ে তৈরী। এতে তিনটি রৌপ্য দণ্ডের উপর একটি সোনালী গোলক স্থাপন করা হয়েছে। দণ্ড তিনটিকে স্ট্যাম্প ও বল সদৃশ্য করে সাজানো হয়েছে যা ক্রিকেটের মৌলিক বিষয় – ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিংকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও গোলককে ক্রিকেট বলরূপে চিত্রিত করা হয়েছে। ট্রফিটি ৬০ সেন্টিমিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এবং ওজন আনুমানিক ১১ কিলোগ্রাম। আগের বিশ্বকাপ বিজয়ী দলের নাম ট্রফিতে খোদাই করা আছে এবং তাতে সর্বমোট বিশটি নাম লিপিবদ্ধ করা যাবে। এখনো আরও দশটি নাম লেখার জায়গা আছে অর্থাৎ আরও ৪০ বছর কাপটি ব্যবহার করা যাবে।
তবে আগের ট্রফিগুলো বিজয়ী দলকে দিয়ে দেয়া হত। কিন্তু আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ট্রফিটি দেয়া হয় না। ১৯৯৯ সাল থেকেই প্রতি বিশ্বকাপে আইসিসি এই ট্রফির হুবহু একটি বিকল্প তৈরি করে বিজয়ী দলকে প্রদান করে। সেই ট্রফিতে শুধুমাত্র বিজয়ী দলের নাম খোদাই করা থাকে। আর মূল ট্রফিটি আইসিসি কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করেন।