বীজগণিত—যোগ / বিয়োগ
ধাঁধাঁ দিয়ে শুরু
একটি ধাঁধা দিয়ে শুরু করা যাক। বলো তো, নিচের খালি বাক্সে কোন সংখ্যাটি বসবে?
– 2 = 4
ঠিক ধরেছো। বাক্সে বসবে 6। কেন বলো তো?
কারণ 6টি কমলা থেকে 2টি কমলা বাদ দিলে থাকে 4টি কমলা। সহজ, তাই না?
এই অংকটি আমরা এখন বীজগণিত দিয়ে করবো। ভয়ের কিছু নেই, শুধু খালি বাক্সের জায়গায় একটি অক্ষর বসাবো ! ( x বা y যেকোনো ইংরেজি অক্ষর বসাতে পারো তোমরা )
বাক্সের জায়গায় x বসিয়ে দেখা যাক:
x – 2 =4
ব্যস, হয়ে গেলো বীজগণিত !
এই অক্ষর (x) আর ওই খালি বাক্সের মধ্যে আসলে কোনো পার্থক্য নেই। দুটোরই মানে, ‘ এখানে কি হবে আমরা এখনও জানি না ’। এক কথায় এই অক্ষরকে আমরা অজানা বা চলক বলি। ইংরেজিতে বলে Variable।
আমরা যেহেতু জানি x এর মান 6, তাই সমাধানটি এখন বসাতে পারি:
x = 6
কেন অক্ষর ব্যবহার করবো?
তোমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসছে কেন আমরা বাক্সের বদলে x ব্যবহার করলাম? তাহলে জেনে নাও:
- তোমার খাতায় একটা খালি বাক্স আঁকো আর একটা x লেখো। কোনটাতে কম সময় লাগলো ? অবশ্যই x ! শুধু তাই না, ‘ খালি বাক্স ’ এর বদলে ‘x’ কথাটি মুখে বলাও সহজ!
- যদি একের বেশি খালি বাক্স থাকে, অর্থাৎ অনেকগুলো অজানা সংখ্যা থাকে, তাহলে একেকটির জন্য আমরা একেক অক্ষর ( x, y, z বা যা ইচ্ছা অক্ষর ! ) ব্যবহার করতে পারি।
কিভাবে সমাধান করবো?
মনে রাখবে, বীজগণিত মানেই ধাঁধাঁ। সব ধাঁধাঁরই উত্তর লুকিয়ে থাকে, আর বীজগণিতের উত্তর লুকিয়ে থাকে এর অক্ষরে।যেমন,x – 2 = 4এখানে একমাত্র অক্ষর x। এই ধাঁধাঁ সমাধান করলে আমরা পাই x = 2।
আচ্ছা, x এর মান যে 6-ই হবে তা আমরা নিশ্চিত বলছি কিভাবে ? মান যদি 6 এর চেয়ে অনেক বড় হতো, যেমন 24 হতো তাহলে কি চট করে বলতে পারতে? (কুইজ : x + 17 = 41 এর সমাধান করো, সময় ৪০ সেকেন্ড ! )
নিচের পদ্ধতিগুলো মনে রাখলে যেকোনো বীজগণিতের সমাধান দ্রুত করে ফেলতে পারবে:
- প্রথমেই বাম পাশে শুধু x (x = …) আনার চেষ্টা করবে। এর জন্য x এর পাশে যেসব সংখ্যা আছে সেগুলো মুছতে হবে
- x এর পাশের সংখ্যাটির সামনে যে চিহ্ন আছে, তার বিপরীত চিহ্ন দিয়ে একই সংখ্যা যোগ বা বিয়োগ করতে হবে ( যেমন বিয়োগ থাকলে যোগ )
- একই কাজ সমান চিহ্নের দুই পাশে করতে হবে।
কেন দুই পাশে যোগ করবো?
ব্যালেন্স রাখার জন্য, অর্থাৎ দুই পাশ সমান রাখার জন্য।
নিচের ছবি তিনটি লক্ষ্য করো। দাঁড়িপাল্লার বাম পাল্লা ধরা যাক সমান চিহ্নের বামপাশের অংশ, ডান পাল্লা ডানপাশের অংশ। প্রথম ছবিতে মূল সমীকরণটি দেওয়া আছে, তাই দাঁড়িপাল্লার পাল্লা দুইটি সমান। দ্বিতীয় ছবিতে যখনই আমরা 2 যোগ করেছি, বাম পাশটি ভারি হয়ে নিচে নেমে গেছে। তৃতীয় ছবিতে ডানপাশে 2 যোগ করে আবার পাল্লা দুইটি সমান করা হয়েছে।
এক কথায় যদি বলি, সমীকরণের সমতা ঠিক রাখার জন্য সমান চিহ্নের একপাশে যা করবো, অন্যপাশেও ঠিক তা-ই করতে হবে।
ছয়টি ধাপ
সব মিলিয়ে আমরা নিচের ধাপগুলো পাচ্ছি x এর মান বের করার জন্য। ধরা যাক নতুন একটি অংক x + 5 = 12। এখান থেকে আমাদের x এর মান বের করতে হবে।
১. |
মূল সমীকরণ |
x+ 5 = 12 |
২. |
আমাদের লক্ষ্য সমান চিহ্নের বামপাশে যেন শুধু x থাকে। সুতরাং, ঝামেলা পাকাচ্ছে কেবল +5। +5 এর পর -5 বসালেই কিন্তু আমরা শুধু x পেয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এটা ভুল, কারণ বামপাশে 5 বিয়োগ দিলেওডানপাশে12 রয়েছে। অর্থাৎ দুই পাশ এখনও সমান হয়নি।
|
x+ 5 – 5= 12 ভুল! |
৩. |
দুই পাশ থেকে 5 বিয়োগ করে
|
x + 5 – 5 = 12 – 5 |
৪. |
সাধারণ যোগবিয়োগের পর ( 5 – 5 = 0 এবং 12 – 7 = 0)
|
x + 0 = 7 |
৫. |
অর্থাৎ
|
x = 7 |
৬. |
মূল সমীকরণে x এর জায়গায় 7 বসিয়ে
|
7 + 5 =12 |
সমাধান হয়ে গেছে ও x এর মান হচ্ছে 7 ! |