বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীরা কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি তা এখন আলোচনা সমালোচনার ঊর্ধ্বে। অনিশ্চয়তা এখন নিত্যসঙ্গী। প্রচন্ড মানসিক চাপের মুখে সকল শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকবৃন্দ।
হরতাল-অবরোধের কারণে ঘরে বসে অবসর সময় ব্যয় করা, লেখাপড়ার প্রতি অনাগ্রহ এবং মনযোগ কমে যাওয়া, সিলেবাস শেষ করার চাপ, সময়মত পরীক্ষা দিতে না পারা, এ সকল বিষয় আজ সমাজের সকল স্তরে মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু হয়ত আমার মত অনেকের ক্ষেত্রেই এর সঙ্গে যোগ হয়েছে একটি সুদূরপ্রসারী ভয়ংকর উদ্বেগ।
আমরা ছেলেবেলা থেকেই একটি প্রবাদ শুনে আসছি, 'আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।' এর অর্থ হল এরাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। অবশ্যই আমরা স্বীকার করব একটি শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটি সুস্থ নির্মল পরিবেশ আবশ্যক। যে শিশু ভালোবাসা পেয়ে বড় হয়, সে ভালোবাসতে শেখে। সেই শিশুই যদি এ সকল সহিংসতা, বর্বরতা, অমানবিকতা দেখে, সে কী করে ভালোবাসতে শিখবে?
আমরা বলতে পারি, সে নিজের পরিবারের কাছ থেকে মানুষকে ভালোবাসতে শিখবে, কিন্তু দেশকে? যে দেশ তার বর্তমানকে পরোয়া করে না, যে দেশে সহিংসতার কারণে তার পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায় এবং এর ফলশ্রুতিস্বরুপ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয়, যে দেশের কারণে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে সে উদ্বিগ্ন হতে দেখে তার অভিভাবক এবং শিক্ষকমন্ডলীকে, সে এই দেশের প্রতি কতটুকু সহানুভুতিশীল হবে? এ দেশকে সে কতটুকু ভালোবাসতে শিখবে?
আমরা অবশ্যই বলতে পারি যে, এ পরিস্থিতি সাময়িক। কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরাই বলেন, শিশুমনে প্রভাব পরার জন্য মাত্র একটিবারই যথেষ্ট। আর আমার সুদুপ্রসারী উদ্বেগ সেটাই।
আমাদের রাজনীতিবিদদের প্রতি আমার অনুরোধ, সহিংসতা পরিহার করে, দেশ ও জাতির স্বার্থে আন্দোলনে শামিল হোন।
ভবিষ্যত প্রজন্মকে আপনাদের কাছে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবার শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ দিন। কারণ, আমরা সকলেই জানি, একমাত্র দেশপ্রেমই একটি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম। এই কোমলমতি শিশু-কিশোরদের, আমাদের প্রিয় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে সহায়ক হোন।
কান্তা সাদাত
হেড অফ প্রাইমারী, সিঙ্গাপুর স্কুল কিন্ডারল্যান্ড
গুলশান, ঢাকা