চার শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে শেষ হয়েছে দুই দিনব্যাপী শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ২০১৭। বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি) ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) যৌথভাবে পঞ্চমবারের মতো এটি আয়োজন করে। বৈজ্ঞানিক পেপার, বৈজ্ঞানিক পোস্টার ও প্রজেক্ট – এই ৩টি বিষয়ে মোট ৫৬ জন শিক্ষার্থীর ২৮টি গবেষণা কাজকে কংগ্রেসে পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে গত শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর ২০১৭) শুরু হওয়া আয়োজন যৌথ কংগ্রেস ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে। দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে জনপ্রিয় করে তোলা, বিজ্ঞানের আনন্দকে উপভোগ করতে শেখানো এবং গুগল সায়েন্স ফেয়ার কিংবা ব্রেকথ্রু জুনিয়র চ্যালেঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানভিত্তিক আয়োজনগুলোতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস আয়োজন করা হচ্ছে।
সারা দেশ থেকে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এবছরের কংগ্রেসে অংশ নেয়ার উদ্দেশে কনসেপ্ট পেপার বা ধারণাপত্র জমা দিয়েছিল। সেখান থেকে কয়েক ধাপে বাছাইকৃত প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী মূল পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। সেরা ২৮ টি গবেষণা কাজকে পুরস্কার দেয়ার পাশাপাশি প্রতি বিষয়ে তিনটি সেরা গবেষণাকে পেপার অফ দ্য কংগ্রেস, পোস্টার অফ দ্য কংগ্রেস ও প্রজেক্ট অফ দ্য কংগ্রেস পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
কলাগাছের কান্ড দিয়ে পলিমার, জ্বালানি, সার, কীটনাশক ইত্যাদি প্রস্তুতের পদ্ধতি আবিস্কার করে সেরা পেপারের পুরস্কার জিতেছে দিনাজপুর সরকারি কলেজের এ এস এম আনাস ফেরদৌস, এ এইচ এম মাহিন ও ফুলবাড়ি সরকারি কলেজের তানজিদ আজম উৎসব। টি ব্যাগের মতো ছোট ব্যাগে জৈব পদার্থ (পলিইলেকট্রলাইট) ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধকরণের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজের জন্যে সেরা প্রজেক্টের পুরস্কার পেয়েছে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের দিদারুল ইসলাম। আলুর অংকুরোদগমে জৈব সারের প্রভাব পর্যবেক্ষণ নিয়ে কাজ করে পোস্টার অফ দ্য কংগ্রেস পুরস্কার পেয়েছে রংপুরের সারাই মুন্সিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মোঃ মাজেদুল ইসলাম ও মর্ণেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মোঃ নাজির হোসেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে যৌথ কংগ্রেসে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত বিজ্ঞানীদের সঙ্গে দেশের বিজ্ঞান শিক্ষা, গবেষণার সুযোগ, বিজ্ঞানের বই ও দরকারি রিসোর্স, বৈজ্ঞানিক গবেষণা কাজ করতে গিয়ে যেসব বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সেসব নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করে। যৌথ কংগ্রেসে পাঁচ দফা প্রস্তাব সবার ভোটে পাশ হয়। দেশের বিজ্ঞান গবেষণাকে আশেপাশের সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা, মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণায় উৎসাহ দেয়া, সারা বছর শিক্ষার্থীরা যাতে সরাওরি বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সরাসরি পেতে পারে, সেজন্যে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি, বিভিন্ন ল্যাবে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ তৈরি, সামার স্কুল আয়োজন, উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশে যারা বিদেশে অবস্থান করছেন, তাদের দেশে ফিরে কাজ করার সুযোগ তৈরি ও দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি, দেশে উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি করাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যৌথ কংগ্রেসে গৃহীত প্রস্তাবে উঠে এসেছে। এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করবে।
কংগ্রেসের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী, ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফাহমিদা নিলুফার চৌধুরী, আইইই ডিস্টিংগুইশড লেকচারার ড. রেজওয়ান খান, বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী ড. রেজাউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আরশাদ মোমেন, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলির অধ্যাপক ড. সাইফ সালাউদ্দিন, বিজ্ঞানচিন্তা সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী।
কংগ্রেসের বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ৫ম জগদীশ চন্দ্র বসু ক্যাম্প।