বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাসের ২৫ শতাংশই নির্গত হয় পরিবহন থেকে। এই অবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য নতুন পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কম কার্বন নিঃসরণকারী গাড়ির ব্যবহার, গাড়িতে গ্যাসের ব্যবহার ইত্যাদি হতে পারে নতুন এ পরিকল্পনার অংশ।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পরিবহন মন্ত্রীদের নিয়ে বুধবার জার্মানির লেইপজিগে শুরু হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ফোরাম সামিট। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় পরিবহন বিভাগ কী ভূমিকা রাখতে পারে সেটাই এখানকার আলোচনার বিষয়বস্তু।
এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এই সামিটের গতি ত্বরান্বিত করতে পরিবহন মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে একটি বিবৃতি দেন এবং ‘নতুন পরিবেশবান্ধব উপায়’ খুঁজে বের করার তাগাদা দেন।
সমগ্র বিশ্বে বর্তমানে ১ বিলিয়নের বেশি গাড়ি রাস্তায় চলছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গাড়ি কেনা আভিজাত্য প্রকাশের একটি দিক মনে করা হয়। ফলে এরাই হয়ে উঠেছে পরিবহনের বড় বাজার। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দশ বছরে ভারতে গাড়ির সংখ্যা ৫০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০ মিলিয়ন। অবশ্য উন্নত দেশগুলোতে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। আমরা যদি পরিবহনে কার্বন নিঃসরণ কমাতে না পারি তাহলে ২০১০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৭০ শতাংশ বেড়ে যাবে।
লো-কার্বন কার
প্রযুক্তির উন্নয়ন আমাদের সামনে নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির আবিষ্কার আমাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অনেকখানিই কমিয়ে দেবে। জার্মানির সরকার ২০২০ সালের মধ্যে ১ মিলিয়ন বৈদ্যুতিক গাড়ি রাস্তায় ছাড়ার পরিকল্পনা করছে। অবশ্য দাম দিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার পক্ষপাতি অনেকেই নন। তাই এ ব্যাপারে আরও চিন্তা করতে হবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ির খরচ কমানো
বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ দেখিয়েছে চীন। তেল আমদানি কমানোর জন্য এবং পরিবেশ দূষণ রোধে চীনা সরকার তার বড় বড় শহরগুলোতে ভর্তুকি দিয়ে ই-চারজিং স্টেশন স্থাপন করেছে। ফলে মানুষ ইলেক্ট্রনিক গাড়ি কিনতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
জ্বালানি হিসেবে গ্যাস
তবে শুধু বৈদ্যুতিক গাড়িই নয়, উপায় আছে আরও অনেক। জ্বালানি হিসেবে তেলের পরিবর্তে গাড়িতে ব্যবহার করা যেতে পারে গ্যাস। পরিবেশবান্ধব গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা পালন করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
পরিকল্পিত নগরী
ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটিউটের এনার্জি এন্ড ক্লাইমেট বিভাগের পরিচালক বেনোয়েট লেফেব্রে মনে করেন, কার্বন নিঃসরণ কমাতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে পরিকল্পিত নগরী। পরিবহন খাতের দুই-তৃতীয়াংশ কার্বন নিঃসরণ এই উপায়ে কমানো সম্ভব। যেমন বৈদ্যুতিক গাড়ি যদি রেল লাইনের মত সোজা চলে তবে তার বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের পরিবর্তে গাড়ি শেয়ার করা, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা, বাইক লেনের ব্যবহার ইত্যাদি পরিকল্পিত নগরেই সম্ভব।