শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় শব্দহীন একটি পরিবেশ তৈরি করলে কেমন হবে বল তো? নিজে একটু শব্দহীন পরিবেশে থাকতে চাইলে অথবা কোন একদিন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ঘরের মধ্যে গান-বাজনার আয়োজন করতে চাইলে আপনাকে একটি সাউন্ডপ্রুফ ঘরের কথা চিন্তা করাই যায়।
আবার, আমরা সবাই “প্রতিধ্বনি” শব্দটির সাথে কম বেশি পরিচিত। কোনো পাহাড়ের চুড়ায় দাঁড়িয়ে জোরে চিৎকার করলে কিছুক্ষনের মধ্যেই একই চিৎকারের শব্দ শোনা যায় আবার। এটাই প্রতিধ্বনি। খোলা জায়গা ছাড়া প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হয় না, হলেও খুবই কম পরিমানে হয়। মাঝে মাঝে আমরা দেখি বিশাল হলরুমে কনসার্ট হচ্ছে, বা কোনো সিনেমা হলে মুভি দেখানো হচ্ছে। সাধারনত সিনেমা হলগুলো অনেক বেশি বড় আকারের হয়ে থাকে; তাহলে এক্ষেত্রে সিনেমার শব্দগুলো পুনরায় ফিরে এসে কানে লাগেনা কেনো? প্রতিধ্বনিত হয় না কেনো?
মূলত, বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই রুমগুলোকে সাউন্ডপ্রুফ করে দেয়া হয়, যা একই সাথে বাইরের এবং ভেতরের শব্দ আসা যাওয়ার পথ নিয়ন্ত্রন করে এবং একই সাথে প্রতিধ্বনিও প্রতিরোধ করে। সাউন্ডপ্রুফ বলতে বোঝানো হয় মূলত শব্দের উৎস সাপেক্ষে শব্দের চাপ কমানোর একটি উপায় বা মাধ্যম। বিভিন্ন উপায়ে এই শব্দের চাপ হ্রাস করা যায় যেমন শব্দের উৎস ও গ্রাহকের মধ্যে দূরত্ব বাড়ানো, অন্তরক ব্যবহার করে শব্দ তরঙ্গ শোষণ বা প্রতিফলিত করা, আদ্র কাঠামো ব্যবহার করে শব্দকে প্রশমিত করা ইত্যাদি।
সাউন্ডপ্রুফ রুমের পূর্বশর্ত হচ্ছে অবশ্যই রুমের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে। ঘরের দেয়াল যত বেশি পুরু হবে, এর শব্দ শোষণ ক্ষমতা তত বেশি হবে। কোন ঘর কতটুকু সাউন্ডপ্রুফ সেটা STC (Sound Transmission Class) অনুযায়ী মেপে নেয়া হয়। কংক্রিটের দেয়ালের ক্ষেত্রে STCএর মান ৪০-৫০ এর মধ্যে থাকে এবং সাধারন দেয়ালে সেটা থাকে ২০-২৫ এর মধ্যে। STC এর মান যত বেশি থাকে রুমটি তত সাউন্ডপ্রুফ হয়। সাউন্ডপ্রুফ রুমের মেঝে এবং দেয়ালে কম্বল বা ফোম জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করেও ভাল ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রুমের দেয়াল ঘেঁষে বইয়ের অনেকগুলো সেলফ রেখে দিলেও সেটি যথেষ্ট পরিমাণে শব্দ শোষণ করে নেয় বলে প্রমান পাওয়া গেছে। তবে, বাজারে কিছু উন্নত মানের ফোমের মত ওয়াল ফ্রেমও পাওয়া যায়, যা সাউন্ডপ্রুফের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ভূমিকা রাখে। সিনেমা হল ছাড়াও, ভয়েস বা মিউজিক রেকর্ডিং রুম, রেডিও শো যে রুম থেকে সম্প্রচার করা হয় ইত্যাদি সাউন্ডপ্রুফ রুমের অনন্য উদাহারণ।