ক্রিসমাসের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ ক্রিসমাস-ট্রি। বর্ণিল বাতি, বেলুন, মালা, তারাসহ আরো নানারকম রঙ্গিন শোভায় শোভিত ক্রিসমাস ট্রি ছোট-বড় সবার মনই রাঙিয়ে দেয় । চিরসবুজ কনিফার জাতীয় গুল্মকেই ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে সাজানো হয়ে থাকে পৃথিবীর সব দেশে । বলা হয়ে থাকে চিরসবুজ ক্রিসমাস ট্রি তারুণ্য এবং জীবনের প্রতীক। তবে বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রির এই প্রচলন কিন্তু একদম শুরু থেকেই ছিলো না।
সর্বপ্রথম বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো শুরু হয় পঞ্চদশ বা ষোড়শ শতাব্দীর জার্মানীতে। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অন্যান্য দেশেও ক্রিসমাস ট্রি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে নেয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ঐতিহ্যগতভাবে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হতো আপেল, বাদাম, হার্ট আকৃতির পেস্ট্রিসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী এবং ফুল দিয়ে । কাঁচের তৈরী পুঁতির মালাও ঝুলিয়ে দেয়া হতো ক্রিসমাস ট্রি-এর গায়ে ।
প্রথম দিকে মোমবাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি আলোকিত করা হলেও বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পর মোমের জায়গা দখল করে নেয় বৈদ্যুতিক ক্রিসমাস বাতি। আধুনিককালে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর উপকরণে অনেক বৈচিত্র ও ভিন্নতা এসেছে।
মালা, ঝলমলে রঙিন কাগজ, টিনসেল, ক্যান্ডি এসব নানারকম উপকরণের সাথে সাথে ক্রিসমাস ট্রি’র চূড়ায় তারকাও বসানো থাকে, এঞ্জেল গেব্রিয়েল বা বেথেলহামের তারার প্রতিনিধিত্ব বোঝাতেই এর ব্যাবহার । কাঁচ বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি গোলককে পাতলা ধাতব পাতে মুড়িয়ে চকচকে চেহারা দেয়া হয় যাতে আলোর প্রতিফলন হয়, এটিও ক্রিসমাস ট্রি সজ্জারই একটি অনুষঙ্গ ।
ব্যাক্তিগতভাবে বা পারিবারিকভাবে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি-তে ফুটে ওঠে ব্যাক্তির অভিরুচি এবং পারিবারিক ঐতিহ্য। এমনকি এর সাথে জড়িয়ে থাকতে পারে পরিবারের ইতিহাস বা গভীর আবেগও। আপাতদৃষ্টিতে আকর্ষনীয় নয় অথচ প্রতি বছরই কোন একটি পরিবার নিয়মিতভাবে ক্রিসমাস ট্রি সাজাতে ব্যাবহার করে আসছে এমন অর্নামেন্টে হয়তো জড়িয়ে থাকতে পারে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য এবং ইতিহাস ।
অন্যদিকে পেশাদার ডিজানাররা সুপারমার্কেট বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যেসব ক্রিসমাস ট্রি সাজায় তা গড়ে উঠে কোন একটা পছন্দসই থিম এর উপর ভিত্তি করে। নির্দিষ্ট কোন রঙ বা নির্দিষ্ট ধরণের অর্নামেন্ট ব্যাবহার করে সাজিয়ে তোলা হয় এসব ক্রিসমাস ট্রি। অনেকেই বাড়ির বাইরে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি-তে কমলার খোসা, বাদাম, লবণবিহীন পপকর্নসহ এমন সব খাবারসামগ্রী ব্যাবহার করেন যা পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।
ক্রিসমাস ট্রি’র স্ট্যান্ডটিকে রঙিন কাপড়ে মুড়িয়ে এর সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়। ক্রিসমাস ট্রির নিচে মাদুর বা ঝালরদেয়া কাপড় বিছিয়ে রাখা হয় যা্র উপর ক্রিসমাসে পাওয়া উপহার জড়ো করে রাখার ঐতিহ্য রয়েছে কোথাও কোথাও। কখনো বা সেই মাদুরের উপর সাজিয়ে রাখা হয় গ্রামীণ জনপদের দৃশ্য, বা মডেল ট্রেইন, অথবা যীশুর জন্মদৃশ্য । তবে ক্রিসমাস ট্রি সাজাতে যেসব অনুষঙ্গ ব্যাবহার করা হয় তাদের অনেকগুলোই শুধুমাত্র সাজানোর উপকরণ না হয়ে গভীর অর্থও বহন করে ।
যেমন হার্ট বোঝায় ভালোবাসা, টি-পট ব্যাবহৃত হয় আতিথেয়তা বোঝাতে, ফুল বহন করে গভীর সৌন্দর্য্য, ফল দিয়ে বোঝানো হয় দানশীলতা এবং ফসলের প্রাচুর্য, পেঁচা জ্ঞান আর মাছ আশীর্বাদের প্রতীক, খরগোশ আশা এবং বিশ্বাসের, আর পাখি আনন্দের এবং উৎফুল্লতার প্রতীক, ছোট ঘন্টা দুর্ভাগ্য তাড়ায় বলে লোকবিশ্বাস প্রচলিত, তারকা আশা এবং দয়াশীলতা, আর ফুলের ঝুড়ি শুভকামনা নির্দেশ করে, আঙুর বন্ধুত্ব ও শুভকামনা এবং ব্যাঙ পেশাগত সাফল্যের প্রতীক ।