পৃথিবীতে কিছু কিছু প্রাণী রয়েছে যারা বহুবছর বাঁচে। দীর্ঘায়ু এসব প্রাণীদের কারো বসবাস জলে কারো স্থলে। চলুন জেনে নেয়া যাক আয়ুর দৌড়ে এগিয়ে থাকা প্রাণীগুলো সর্ম্পকে-
স্টারজন্স মাছ
স্টারজন্স (Sturgeons) মাছ ১০০ বছরেরও বেশি বাঁচে। এদের নাক সূচালো, দেহ লম্বা। এদের ডিম খুব সুস্বাদু হয় বলে সামুদ্রিক মাছের ডিমের অন্যতম উৎস হিসেবে ধরা হয় এদেরকে। সারা জীবনে স্টারজন্স মাছ বিশাল পথ পাড়ি দেয়। এরা স্বাদু পানিতে ডিম পাড়ে অর্থাৎ এদের জন্ম হয় স্বাদু পানিতেই। কিন্তু জীবন কাটানোর জন্য এরা সমুদ্রে যায় আবার ডিম পাড়ার জন্য স্বাদু পানিতে ফিরে আসে। ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য অনেকটা এইরকম।
দীর্ঘজীবী পাখিরা
হাঁটা আর সাঁতার কাটার মত উড়াও সম্ভবত স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো। কেননা দীর্ঘজীবী প্রাণীদের মধ্যে পাখির সংখ্যা বেশি। এমনই এক পাখি Gray Parrot বা ধূসর তোতাপাখি। এরা ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। লন্ডন চিড়িয়াখানায় একটা কাকাতুয়া তার ৮০তম জন্মদিন পালন করেছে। এছাড়া দাঁড়কাক ৯০ বছরও বাঁচে।
বাউহেড তিমি
বাউহেড তিমি (Bowhead whales) ২০০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। তবে এদের সঠিক বয়স বের করাটা দুষ্কর। বয়স বের করার জন্য গবেষকদের এই তিমির চোখের জৈব রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা লাগে। তবে মাঝেমধ্যে ভাগ্যও সহায় হয়। বছর দুয়েক আগে একটা বাউহেড তিমির মাংসে ১৮৯০ সালের একটা হারপুনের টুকরা পাওয়া গিয়েছে। সুতরাং তিমিটার বয়স যে ১০০ বছরের বেশি তাতে কোন সন্দেহ নেই।
হাতি
হাতিরা সাধারণত দল বেঁধে বাস করে। আর বন্য পশুদের মধ্যে এরা অন্যতম যাদের তেমন কোন শত্রু নেই। তবে এদের সবচেয়ে বড় শত্রু শিকারিরা। শিকারিদের হাতে অনেক হাতিই মারা পড়ে। আর তা না হলে গড়ে ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পাড়ে একটি হাতি।
আফ্রিকার তৃণভূমিতে পানি আর ঘাসের সন্ধানে চড়ে বেড়ায় এরা। মানুষের সাথে হাতির একটা অদ্ভুত মিল রয়েছে। যখন তারা এমন একটি জায়গা অতিক্রম করে যেখানে তাদের দলের কোন একটি হাতি একসময় মারা গিয়েছে সেখানে তারা থামে এবং শোক প্রকাশ করে।
কচ্ছপ
কচ্ছপেরা বহুবছর বাঁচে, কমপক্ষে ১০০ বছর তো বটেই। আর ইকুয়েডরের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্যালাপাগোস দ্বীপের কচ্ছপেরা আরও বেশি বছর বাঁচে। গ্যালাপাগোসের এমনই এক কচ্ছপের নাম হ্যারিয়েট। ২০০৬ সালে ১৭৫ বছর বয়সে মারা যায় এটি। বিশালাকৃতির এই কচ্ছপটিকে সংরক্ষিত করে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। তাদের প্রজাতির সর্বশেষ কচ্ছপ ছিল এটি।
সামুদ্রিক ঝিনুক
যদিও দেখতে খুব একটা আকর্ষণীয় নয় তবে সামুদ্রিক ঝিনুক নিয়ে বিজ্ঞানীরা খুবই উৎসাহী। সবচাইতে বেশি বয়সের যে সামুদ্রিক ঝিনুকটি পাওয়া গিয়েছে সেটির বয়স ৪১০ বছর। বিজ্ঞানীরা আগের শতাব্দীর জলবায়ু বা সমুদ্রের অবস্থা জানতে প্রায়ই সামুদ্রিক ঝিনুকের খোলস বিশ্লেষণ করে থাকে।
সামুদ্রিক স্পঞ্জ
সামুদ্রিক স্পঞ্জ খুব ধীরে ধীরে বাড়ে, কিন্তু বাঁচে বহুবছর। এমনই এক স্পঞ্জ Scolymastra joubini রয়েছে এন্টারটিক সাগরের তলদেশে। এখন পর্যন্ত যেকোনো প্রাণীর চেয়ে এটি সবচাইতে বয়স্ক, সম্ভবত ১০ হাজার বছর। Alfred Wegener Institute-এর গবেষকেরা স্পঞ্জের অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ ব্যবহার করে এটির বয়স নির্ধারণ করেছেন।