উড়োজাহাজ বিবর্তনের ইতিহাসে এতদিন পর্যন্ত মানুষ বিশাল বিশাল অনেক উড়োজাহাজই বানিয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সাল নাগাদ আকাশে উড়তে যাচ্ছে এ যাবতকালে নির্মিত সর্ববৃহৎ উড়োজাহাজ। অতিকায় এই এয়ারক্রাফটের নাম ‘স্ট্রাটোলঞ্চ’ (Stratolaunch)।
আমেরিকার ক্যালিফোর্ণিয়ার Mojave Air and Space Port কোম্পানি বর্তমানে এই বিমানটি তৈরি করছে। এরোস্পেস ফার্ম Scaled Composites-এর দেখাশোনা করছে। বিমানটির ডাকনাম রাখা হয়েছে ‘রক’।
এই বিমানটির বর্ণনা রীতিমতো চোয়াল ঝুলে পড়ার মত। এই বিমানে রয়েছে ২টি ফিউজলেজ (বিমানের মূল অংশ, দেখতে অনেকটা মিসাইলের মত), Pratt & Whitney কোম্পানির ৬টি জেট ইঞ্জিন, ২৮টি ল্যান্ডিং গিয়ার হুইল, ৩৮৫ ফুট লম্বা বিরাট আকারের পাখা।
Scaled Composites-এর সভাপতি কেভিন মাইকি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এই প্লেনটি যদি একটি ফুটবল মাঠের সেন্টার বরাবর বসানো হয় তাহলে এর পাখা দুই পাশের দুই গোলপোস্টকে ১৫ ফুট করে ছাড়িয়ে যাবে’।
এই বিমান 'Spruce Goose' H-4 Hercules বিমানের চাইতে ৬৫ ফুট চওড়া, মহাকাশযান বহনকারী বিমান Soviet Antonov An-225-এর চাইতে ৯৫ ফুট চওড়া এবং অত্যাধুনিক Airbus A380 থেকে ১২৩ ফুট বেশি চওড়া। মূলত, অব্যবহৃত দুটি বোয়িং-৭৪৭ বিমান একত্রিত করেই এই স্ট্রাটোলঞ্চ বিমান তৈরি করা হচ্ছে। আর এ বুদ্ধিটি এসেছে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেনের মাথা থেকে।
তবে ‘রক’ কোন যাত্রীবাহী বিমান হিসেবে কাজ করবে না, কোন জঙ্গি বা যুদ্ধবিমান হিসেবেও নয়। মূলত মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের জন্য ব্যবহার করতেই এই বিমান তৈরি করা হচ্ছে।
স্ট্রাটোলঞ্চের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যেন এটি এর দুই ফিউজলেজের মাঝখানে ৩ স্তরবিশিষ্ট একটি রকেট (স্যাটেলাইটসহ) বহন করতে পারে। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর রকেটটি প্লেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাকাশে ছুটে যাবে এবং পরে উপগ্রহটিকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। রকেটসহ ‘রক’-এর মোট ওজন হবে ১.৩ মিলিয়ন পাউন্ড।
প্রশ্ন জাগতে পারে, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য কেন বিমান ব্যবহার করা হবে? স্ট্রাটোলঞ্চ প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো অবস্থায় যে কোনো আবহাওয়ায় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম (যদি বিমান উড্ডয়নের জন্য পর্যাপ্ত রানওয়ে থাকে)।
মূলত, নিজেকে সবচেয়ে বড় আকৃতির বিমান হিসেবে পরিচিত করতে নয়, বরং মহাকাশে উপগ্রহ উড্ডয়নের এক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করার জন্যই এই বিমান তৈরি করা হচ্ছে।