পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই অনেক ধারণা চলে আসছে। অনেক কল্পকথা ও রয়েছে এর মধ্যে।
আদিকালে মানুষ বিশ্বাস করত যে, পৃথিবীর আকার হচ্ছে চ্যাপ্টা বা স্ফীত। শতশত বছর ধরে মানুষ পৃথিবীর কিনারা থেকে ছিটকে পড়ে যাবার ভয়ে বেশি দূর পর্যন্ত ভ্রমন করতো না। ১৫৯৭ সালে ফ্রান্সিস ড্রেক প্রথম পৃথিবীর চারপাশে নৌ-ভ্রমন করে প্রমান করেছিলেন যে, পৃথিবী গোলাকার।
এক সময় বলা হতো, পৃথিবীটা চ্যাপ্টা, আর বিরাট এক কচ্ছপের পিঠের উপর এটি রয়েছে। অনেকগুলো কচ্ছপ পরপর নিচে নিচে দাঁড়িয়ে পৃথিবীটা ধরে রেখেছে।
কিন্তু বাস্তবে এরকম কিছুই নয়। বিজ্ঞানের কল্যানে আজ আমরা সবই জানতে পারছি। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর “বিগ ব্যাং”থিওরিটি পৃথিবীর সৃষ্টির রহস্য মোটামুটি পরিস্কার করে দিয়েছে। মহাবিশ্ব সৃষ্টির উপর তার বিখ্যাত বই “A Brief History of Time” ।
এই থিওরিতে যা বলা হয়েছে তার সারমর্ম মোটামুটি এরকম যে,
১) সৃষ্টির শুরুতে এই মহাবিশ্ব ছিল একটি সিঙ্গেল এনটিটি (Entity ) অর্থাৎ সমস্ত বস্তু, স্পেস এবং সময় সবই এক বিন্দুতে আবদ্ধ ছিল
২) এক প্রচন্ড শক্তিশালী বিস্ফোরণের বা বিগ ব্যাং এর মধ্যে দিয়ে এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি
৩) বিগ ব্যাং এর পর সম্প্রসারণশীলতার মধ্যে দিয়ে এই মহাবিশ্ব রুপান্তরিত হয় এবং প্রাণী বসবাস যোগ্যে পরিনত হয়।
৪) মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তু সঙ্কুচিত অবস্থায় একটি বিন্দুর মত ছিল ঠিক যেন একটি অতি-পরমাণু ( Superatom )। আজ থেকে ১৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে এই অতি-পরমাণুর মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে। তাই, মহাবিশ্ব অবিরতভাবে সম্প্রসারিত হতে থাকে। পুঞ্জ পুঞ্জ বস্তু চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছুটতে থাকে। এসব পুঞ্জ থেকে তৈরি হতে থাকে ছায়াপথ, গ্রহ, উপগ্রহ। সেই থেকে মহাবিশ্বের সবকিছু অবিরাম পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারটা একটু ভালোভাবে বোঝার জন্য একটা সহজ পরীক্ষা করে ফেলতে পারি। একটা কালো রঙের বেলুন নেয়া যাক, তার গায়ে নানা স্থানে সাদা কালি দিয়ে অসংখ্য ছোটো ছোটো বৃত্ত এঁকে দেই। এবার যদি বেলুনটিকে ফুঁ দিয়ে ফুলানো হয় তাহলে দেখবো বেলুনটি ফুলে যতটা প্রসারিত হচ্ছে এর বৃত্তগুলোও তত পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো বৃত্তই কারো নিকটবর্তী হচ্ছে না। আমাদের মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও ঠিক এমন সম্প্রসারণ ঘটছে।
মূলকথা এই যে, যদি সব নক্ষত্র তথা গ্যালাক্সি পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে থাকে তবে নিশ্চয়ই এরা আদিতে একত্রে এবং বিন্দুতে ছিল!