ছোটবেলায় “বাংলাদেশের সীমানা” আমরা অনেকেই পড়েছি, উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর…বাংলাদেশের তিন দিকেই ভারত, আর এক কোণায় মায়ানমার এবং পুরো দক্ষিণ অংশজুড়ে বঙ্গপোসাগর। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেরই এরকম সীমানা রয়েছে। কোনো না কোনো দিক দিয়ে সমুদ্র, কিংবা যেকোনো জলাধারের সাথে এর সীমান্ত যুক্ত থাকবেই। কিন্তু কিছু কিছু দেশ আছে যাদের চারদিকেই স্থলভূমি। এই দেশগুলোকে বলা হয় Landlocked Country। যদি কোন দেশের কোনরুপ জলসীমা না থাকে বা যদি কোন একটি দেশের চারদিকের সীমানা অন্যান্য দেশের সাথে থাকে তাকে ল্যান্ডলকড কান্ট্রি বা স্থলবেষ্টিত দেশ বলা হয়। এই সমস্ত দেশগুলোকে পার্শ্ববর্তী দেশের সমূদ্রবন্দর ব্যবহার করতে হয় মালামাল পরিবহনের জন্য।
পৃথিবীতে মোট ৪৮টি স্থলবেষ্টিত দেশ রয়েছে। যার মধ্যে দক্ষিন আমেরিকায় রয়েছে দুটি – বলিভিয়া এবং প্যারাগুয়ে। বাকি সবগুলো দেশ আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ায়।
এই ল্যান্ডলকড দেশগুলো আবার কয়েকভাগে বিভক্ত। যেমনঃ
১. শুধু একটি দেশ দ্বারা চারপাশ বেষ্টিত– যেমনঃ ভ্যাটিকান সিটি (রোম শহরের মধ্যেখানে অবস্থিত ), লেসোথো (দক্ষিন আফ্রিকার ভেতরের একটি দেশ, যা চারপাশ দিয়ে দক্ষিন আফ্রিকার সীমানার সাথে যুক্ত)। এছাড়া, ইউরোপের আরেক দেশ স্যান ম্যারিনো ও ইতালি দ্বারা বেষ্টিত।
২. দুটি দেশ দিয়ে বেষ্টিতঃ যে দেশের সীমানা শুধুমাত্র দুটি দেশের সাথে যুক্ত সে দেশগুলো এ ভাগে পড়বে। যেমনঃ নেপাল ও ভুটান, এই দেশ দুটি ভারত ও চীন দিয়ে বেষ্টিত। এছাড়া, ইউরোপে অ্যাণ্ডোরা ( ফ্রান্স ও স্পেন দ্বারা পরিবেষ্টিত) এই শ্রেণীর অন্তর্গত। আফ্রিকা মহাদেশের সোয়াজিল্যান্ড ( দক্ষিণ আফ্রিকা ও মোজাম্বিক দ্বারা পরিবেষ্টিত) ও রয়েছে এই শ্রেণীর মধ্যে।
৩. ডাবল ল্যান্ডলকড দেশঃ এটি খুব মজার একটি ব্যাপার। একটি দেশ নিজে ল্যান্ডলকড, সাথে সাথে আরেকটি দেশকেও চারপাশ দিয়ে ঘিরে তাকেও ল্যান্ডলক করে দিলে দ্বিতীয় দেশটিকে “ডাবল ল্যান্ডলকড” দেশ বলা হয়। যেমনঃ মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান। এই দেশটি একসাথে আফগানিস্তান, কাজাকাস্তান, কিরগিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কেমেনিস্তান দিয়ে বেষ্টিত। বেস্টনকারী সবগুলো দেশ নিজেরাও ল্যান্ডলকড। আবার মধ্য ইউরোপের দেশ লিশটেনস্টাইন (সুইজারল্যান্ড ও অষ্ট্রিয়া) দ্বারা বেষ্টিত।
ইউক্রেন, মলডোভা এই দেশগুলোও একসময় ল্যান্ডলক ছিলো। কিন্তু ২০০৫ সালে নতুন করে সীমারেখা নির্ধারনের পর দানিউব নদীর ৬০০ মিটারের মত অংশ দেশ দুটির সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এ কারণে দেশ দুটি এখন আর ল্যান্ডলক কান্ট্রি হিসেবে গন্য হয় না।
উন্নয়নশীল স্থলবেষ্টিত দেশে আন্তর্জাতিক কার্গো পরিবহন খরচ উপকূলীয় উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক বেশী থাকে। স্থলবেষ্টিত দেশ মূলত রেলওয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। এছাড়া, ল্যান্ডলকড দেশগুলো প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে রাজনৈতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে। কেননা প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে রাজনৈতিক সুসম্পর্ক দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।