আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো বান্টু জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে।
আফ্রিকার প্রায় ৪০০ আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে একত্রে বান্টু জনগোষ্ঠী বলে ডাকা হয়। ক্যামেরুন থেকে শুরু করে আফ্রিকার দক্ষিনাঞ্চল, মধ্য ও পূর্ব আফ্রিকায় ছড়িয়ে আছে এই জনগোষ্ঠী। এদের সংস্কৃতিতে আর জীবনযাত্রায় কিছুটা পার্থক্য থাকলেও এরা একই ভাষায় কথা বলে। সেটি হচ্ছে বান্টু ভাষা।
ধারণা করা হয়, প্রায় ৪ হাজার বছর আগে পশ্চিম আফ্রিকায় বান্টুদের উৎপত্তি ঘটে। সেখান থেকে তারা ক্রমান্বয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক নতুন গোত্রের উদ্ভব ঘটে। হুতু, তুতসি, টুয়া এসব জনগোষ্ঠী মূলত বান্টু জনগোষ্ঠী থেকে জন্ম নিয়েছে। বর্তমানে রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, অ্যাঙ্গোলা, জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রচুর বান্টু বসবাস করে।
মূলত এই অঞ্চলে আগে ‘খইসান’ নামক এক জনগোষ্ঠী বাস করতো। এরপর বান্টুদের উদ্ভব ঘটে এবং ধীরে ধীরে তারা ছোট ছোট গোত্রে বিভক্ত হয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ষোড়শ শতকের মধ্যেই বান্টু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থায়ী হয় এবং কৃষি ও গবাদি পশু পালন শুরু করে।
বান্টুদের মধ্যে জমি দখলের কোন স্বভাব দেখা যায় না। একসময় জমির সীমানার ব্যাপারটি সম্পর্কেও তাদের ভালো ধারণা ছিল না। বর্তমানে যেসব আদি বান্টুদের দেখা যায় তারা অনেক ছোট ছোট গোত্রে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। এরা একক পরিবার নিয়ে বাস করে। পরিবার নিয়ে তারা খড়ের তৈরি ক্রালে বসবাস করে। পরিবারের প্রধান হচ্ছে পুরুষ। তার এক বা একাধিক স্ত্রী থাকতে পারে এবং বাচ্চা থাকতে পারে। সেলাই, শিকার ও পশুপালনের কাজ করে পুরুষেরা এবং কৃষি ও গৃহস্থালি কাজ করে নারীরা।
বান্টু জনগোষ্ঠী মূলত বান্টু ভাষাই ব্যবহার করে থাকে। তবে বান্টুর কাছাকাছি কয়েকটি ভাষাও এরা ব্যবহার করে থাকে যেমনঃ সোয়ানা, সোথো, জুলু, জোসা ইত্যাদি।
বান্টুরা আত্মায় বিশ্বাস করে। তাদের ধারণা কেউ মারা গেলে তার আত্মা তার পূর্বপুরুষদের সাথে যোগ দেয়। বান্টুরা নানারকম জাদুবিদ্যায়ও বিশ্বাস করে।