আমেরিকান বিপ্লব অনেকের কাছে ‘আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধ’ বা ‘আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। ১৭৭৫ সালে শুরু হয়ে ১৭৮৩ সালে শেষ হওয়া এ বিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসে রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের একটি বড় উদাহরণ। উত্তর আমেরিকার ১৩টি রাজ্য একত্রিত হয়ে গড়ে তোলে ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা এবং ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
বিপ্লবের আগুন সর্বপ্রথম জ্বলে উঠে ১৭৬৫ সালেই। আমেরিকান উপনিবেশিক সমাজ ইংরেজ কর্তৃপক্ষকে রাজস্ব দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সেই সাথে অন্যায়ভাবে তৈরি করা ব্রিটিশ আইনের প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে তারা। আমেরিকান কোন প্রতিনিধি ছাড়াই ব্রিটিশদের এমন শাসন আমেরিকানরা মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং সকল ইংরেজ কর্মকর্তাকে পদচ্যুত করে।
১৭৭৪ সালে ১৩টি রাজ্য নিজস্ব আইনসভা গড়ে তোলে। ইংরেজরা তাদের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য সৈন্য পাঠায়। ১৭৭৫ সালে ১৩টি রাজ্য নিজেদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে। নিজেদের রক্ষা করতে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠিত আইনকে রক্ষা করতে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে যা আমেরিকার স্বাধীনতা বিপ্লবে রূপ নেয়।
জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে চলতে থাকে আমেরিকানদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা (ডিক্লারেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স) ঘোষণা করে কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস।
এর মধ্যে ব্রিটিশরা বিদ্রোহ দমন করার জন্য বৃহৎ আকারে সেনা সমবেত করে। আমেরিকান বিদ্রোহী সেনাদের বিরুদ্ধে তারা গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করে। অন্যদিকে ফ্রান্স, স্পেন ও ডাচ প্রজাতন্ত্র ১৭৭৬ সালের শুরু থেকেই গোপনে বিপ্লবীদেরকে রসদ ও অস্ত্র সরবরাহ করে আসছিল। ১৭৭৮ সালে ফ্রান্স এবং ১৭৭৯ সালে স্পেন সরাসরি এ যুদ্ধে যোগ দেয়। স্থল ও নৌ উভয়ক্ষেত্রেই আমেরিকানরা সহায়তা পায় ফলে ব্রিটিশরা উত্তর আমেরিকা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ১৭৮১ সালের অক্টোবর মাসে আমেরিকার বিজয় হলেও ১৭৮৩ সালে প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকা পুরোপুরি স্বাধীনতা অর্জন করে।