আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো আফ্রিকার জাতিগোষ্ঠী ‘তুতসি’ সম্পর্কে।
তুতসিরা আফ্রিকার একটি জাতিগোষ্ঠী যারা আফ্রিকান গ্রেট লেক অঞ্চলে বসবাস করে। মূলত রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের উত্তরপূর্ব অংশে এদের বসবাস।
তুতসিদেরকে আবাতুতসি নামেও ডাকা হয়। ঐতিহাসিকভাবে এরা ওয়াতুতসি, ওয়াতুসি, ওয়াহুমা বা ওয়াহিমা নামেও পরিচিত। এই অঞ্চলের প্রধান তিনটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে তুতসি ২য় বৃহত্তম। হুতুরা বৃহত্তম এবং টুয়া জনগোষ্ঠী ক্ষুদ্রতম।
তুতসিরা একসময় গবাদি পশু পালন করতো। এরা সংখ্যায় কম থাকলেও এদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল এবং সমাজের উঁচু স্তরে বাস করতো। আফ্রিকায় ইউরোপিয়ান শাসন শুরু হবার পরেও তুতসিরা প্রাধান্য পেতে থাকে। এমনকি ইউরোপিয়ান শাসন শেষ হবার সময় তারা তুতসিদের হাতেই ক্ষমতা দিয়ে যায়।

তুতসিরা তাদের আদি বান্টু ভাষা রুয়ান্ডা-রুন্ডি ভাষায় কথা বলে। তবে বেলজিয়ামের উপনিবেশ থাকার কারণে তাদের অনেকেই ফ্রেঞ্চ ভাষা ব্যবহার করে। অনেক তুতসির নামেও ফ্রেঞ্চ দেখা যায়।
এখনকার বেশীরভাগ তুতসিই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। তবে কিছু আছে যারা তাদের আদি ধর্মে বিশ্বাস করে। এদের সৃষ্টিকর্তার নাম ‘ইমানা’। মৃত মানুষের আত্মাকে তারা ডাকে ‘আবাজিমা’ এবং আত্মাকে খুশি রাখতে তারা অনেক কিছুই উৎসর্গ করে।
আদি তুতসিদের সাথে আধুনিক তুতসিদের অনেক পার্থক্যই চোখে পড়ে। আদিরা জঙ্গলের দিকে বাস করলেও আধুনিক তুতসিরা শহরেই বাস করে। আদি তুতসিরা কাঠের বা ঘরের তৈরি ঘরে থাকে আর শহরের তুতসিরা থাকে দালানে। কাপড়ের রয়েছে ভিন্নতা। আগে তুতসিরা আলখাল্লা জাতীয় পোশাক পরলেও এখন তারা শার্ট-প্যান্ট-স্যুট পরে।

গত ১০০ বছরে হুতু এবং তুতসিদের মধ্যে অনেকগুলো সংঘর্ষ, গণহত্যা এবং উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস হচ্ছে ১৯৯৪ সালে সংঘটিত রুয়ান্ডা জেনোসাইড যেখানে প্রায় ৮ লাখ তুতসি হত্যা করে হুতুরা। হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ নামক মানবাধিকার সংস্থার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার গণহত্যায় ৭৭% তুতসিদের হত্যা করা হয়েছিল। বর্তমানে তুতসি জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ।