বিজ্ঞান নিয়ে অনেকের মনেই ভয়ভীতি থাকে। জটিল সব সূত্র, গাণিতিক ব্যাখ্যা আর কাঠখোট্টা সব শব্দ শুনলেই কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। জটিল সব ঘটনাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে সহজভাবে তুলে ধরার কাজটিই করছে সায়েন্স রকস টিভি অনুষ্ঠানটি। প্রতি সপ্তাহে ২টি করে ৫২ সপ্তাহে মোট ১০৪টি মজার মজার সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট দেখানো হবে তোমাদের আর বলে দেয়া হবে সেটা কেন হলো, কিভাবে হলো। আজ এক ঝলক জেনে নেয়া যাক সায়েন্স রকস টিভি অনুষ্ঠানের নবম পর্বে দেখানো ‘আইস ট্রে ব্যাটারি’ পরীক্ষাটি।
আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে আমরা কোন ভাবেই ইলেক্ট্রেসিটি তথা বিদ্যুতের অবদান অস্বীকার করতে পারব না। আমাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপে প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপেই রয়েছে বিদ্যুতের ব্যবহার। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় আমরা বৈদ্যুতিক তার থেকে বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা যে টর্চ লাইট, ঘড়ি কিংবা টিভির রিমোটে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছি সেটা আসে কোথা থেকে? আসলে এগুলোর ভেতর আমরা ব্যবহার করছি ব্যাটারি। আলেসান্দ্র ভোলটা ১৮০০ সালে প্রথম ইলেকট্রিকাল ব্যাটারি তৈরি করেন। আমরা আজ সেই ব্যাটারির অনুকরণে বানিয়ে দেখাবো আইস ট্রে ব্যাটারি।
যা যা লাগবেঃ
আমরা এখানে এমন সব উপাদান ব্যবহার করবো যা আমাদের বাসায় হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। এই পরীক্ষার জন্য আমাদের দরকার হবে,
১)ভিনেগার বা সিরকা
২) তামার তার ৫ টুকরা
৩) লোহার পেরেক ৫টা
৪) আইস ট্রে ১ টি
৫) LED লাইট ১টি
কীভাবে করবোঃ
প্রথমে তামার তার পাঁচটা পেরেকের মাথায় পেঁচাতে হবে। তার পেঁচানোর সময় খুবই সাবধান থাকতে হবে যেন তার বা পেরেকে দিয়ে কোনভাবেই আমাদের হাত কেটে না যায়। এরপর আমাদের আইস ট্রের মধ্যে ভিনেগার ঢালতে হবে। আইস ট্রে যদি না থাকে, আমরা অন্য কিছু যেমনঃ বোতলের মুখও ব্যবহার করতে পারি।
আইস ট্রে এর ছয়টি ঘরে আমরা ভিনেগার নিলাম। এবার আমরা একটা সার্কিট বা বর্তনী বানাবো। এজন্য পেরেকগুলো রাখবো প্রতিটি ঘরে। খেয়াল রাখতে হবে যে প্রতিটি ঘরে যাতে একটি করে পেরেক এবং একটি তামার তার থাকে। কিন্তু ঘরতো ৬টা এবং পেরেক ৫টা। তাহলে একটা ঘরে তো পেরেক থাকার কথা না, তাই না?
এক্ষত্রে দুটি ঘর থাকবে, যেখানে হয় পেরেক থাকবে না হলে শুধু তার থাকবে। এ দুটি ঘর এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি। এলইডি লাইটটা নিব এবং লাইটের পিন দুটো এই দুটি ঘরে বসিয়ে দিবো। কি হচ্ছে? লাইট-জ্বলছে! এবার আমরা মজার একটি জিনিস দেখি। লাইটটি তুলে লাইটের পিন দুটি উল্টো ঘরে রাখি। কি হচ্ছে?? লাইট আর কাজ করছে না। কিন্তু আবার পিনগুলো ঘুরিয়ে দিলে এটা কাজ করে।
কেন হচ্ছেঃ
ভিনেগার হচ্ছে এমন একটি বস্তু যার ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ যেতে পারে। একে কন্ডাক্টর বা তড়িৎ পরিবাহী বলা হয়। যখন আমরা একটি কন্ডাক্টর এর মধ্যে দুটি দুই ধরনের ধাতু রাখি, এদের একটা থেকে আরেকটাতে ইলেকট্রন চলাচল করে। ইলেক্ট্রনের এ চলাচলকেই বলা হয় ইলেক্ট্রিসিটি বা বিদ্যুৎ। সেটা দিয়েই এলইডি লাইটটা জ্বলছে। এলইডি লাইট অথবা অন্য যেকোনো লাইটই এই বৈদ্যুতিক শক্তিকে নিয়ে একে আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। তাই আমরা আলো পাই। কিন্তু এলইডি ঘুরিয়ে দিলে কেন কাজ হয়না?
এলিডির পুরো নাম হচ্ছে “লাইট এমিটিং ডায়োড”। ডায়োড হচ্ছে খুবই কমন একটি জিনিস। এটি সব ইলেক্ট্রনিক্স যেমনঃ মোবাইল, টিভি, ইত্যাদির মধ্যে থাকে। ডায়োডের কাজ হচ্ছে ইলেকট্রনকে শুধু একদিকে প্রবাহিত হতে দেওয়া। আমাদের বানানো এই বর্তনীতে ইলেকট্রন একদিক থেকে আরেক দিকে যায়। যখন আমি মাঝখানে এলইডি লাইট দিয়ে দেই তখন ইলেকট্রন এর মধ্যে দিয়ে যায় এবং লাইট জ্বলে। কিন্তু যখন আমি উলটো করে দেই তখন ইলেকট্রন ভিনেগারের মধ্যে দিয়ে ঠিকই যায় কিন্তু এলইডির ভিতরে আর ঢোকেনা। তাই লাইটও কাজ করেনা।