আমাদের এ পৃথিবীতে মূল্যবান অনেক পাথর আর খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। খনি থেকে পাওয়া পাথরের মধ্যে অনেকগুলোই অত্যন্ত দুর্লভ এবং বহু গুনাগুনে সমৃদ্ধ। এসব পাথর দেখতে যেমন অত্যন্ত সুন্দর তেমনি এদের বাজারদরও অনেক। হীরা, চুনি, পান্না, নীলা এরকম বহু মূল্যবান পাথর পৃথিবীর বুকে পাওয়া যায় যেগুলো মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষার বস্তু। এসব রত্ন পাথরের রয়েছে অনেক ইতিহাস, এদের গঠন উপাদান ও প্রকৃতি হয়ে থাকে বিভিন্ন, এদের সন্ধানও মেলে ভিন্ন জায়গায়, অনেক জায়গায় অনেক রত্নকে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান দেয়া হয়ে থাকে। মহামূল্যবান বিভিন্ন সব রত্নপাথরের এরকম অনেক তথ্য আমরা জানবো আমাদের এই আয়োজনে। আজকে জানবো পান্না নিয়ে।
ধরুণ, আপনার হাতে একটি গাঢ় সবুজ রঙের পাথর দেওয়া হল। পাথরটা আপনি হাতের তালুতে রাখতেই দেখলেন পাথর থেকে আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। অনেকটা আরব্য রজনীতে লেখা কোন হীরা-জহরতের মতো। আপনি হয়তো ভাবছেন এরকম কোন পাথর আসলেই আছে কিনা!
আপনার এই ধারণাকে ভুল প্রমান করে দেবে এমরাল্ড জেমস্টোন। সবুজ রঙের এমরাল্ডকে ভারতীয় উপমহাদেশে বলা হয় সবুজ পান্না। সবুজ রঙের এই এমরাল্ড পাথরকে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান পাথরগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হয়। এটি মূলত এক ধরনের সবুজ রঙের খনিজ পদার্থ থেকে সৃষ্টি হয়। এই খনিজ পদার্থ বেরিল নামে পরিচিত। বেরিল হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম, বেরিলিয়াম ও ধাতব পদার্থ ক্রোমিয়ামের সমন্বয়ে গঠিত একধরনের যৌগিক পদার্থ। ক্রোমিয়াম এই খনিজ পদার্থকে কালচে সবুজ হতে সাহায্য করে। এমরাল্ড সাধারণত অত্যাধিক গাঢ় অথবা কালচে সবুজ রঙের হয় এবং এর পার্শ্ববর্তী রঙ নীল অথবা হলুদ হতে পারে। এই মূল্যবান পাথর খুব ভঙ্গুর প্রকৃতির এবং সামান্য আঘাতেই ভেঙ্গে যেতে পারে। এটি খুব স্বচ্ছ এবং শীতল।
মানব ইতিহাসের প্রথম থেকেই এমরাল্ড বা পান্না পাথরকে পবিত্র এবং মূল্যবান পাথর হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মুঘল সম্রাজ্য পান্নার অনেক বড় ভক্ত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জাদুঘরে মুঘল সম্রাজ্যের কিছু পান্না পাথরের নিদর্শন এখনো রয়েছে।
বর্তমানে সবচেয়ে সূক্ষ এবং নিখুঁত এমরাল্ড খনি থেকে প্রসূত ও উত্তোলিত হয় কলোম্বিয়া এবং জাম্বিয়া থেকে। যদিও প্রাচীনকালে মিশর এবং ভারতীয় উপমহাদেশ এমরাল্ডের জন্য বিখ্যাত ছিল। হাজার বছর ধরে এই এমরাল্ড ভারতীয় উপমহাদেশে পান্না নামে পরিচিত এবং ভালোবাসা, উদারতা, সমবেদনা, জ্ঞান এবং মানসিক উন্নতির সাথে গভীরভাবে সংযুক্তির কথা বিশ্বাস করা হয়।