বাংলাদেশের বাজারে ১৭ এপ্রিল ২০১৮ উন্মোচিত হয়েছে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অপোর সেলফি এক্সপার্ট সিরিজের সর্বশেষ স্মার্টফোন অপো এফ৭। ২৫ এপ্রিল থেকে এটি বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাবে।
দ্বিতীয় প্রজন্মের এআই টেকনোলজিসমৃদ্ধ এই ফোনটি দুটি সংস্করণে পাওয়া যাবে। ৪ গিগাবাইট র্যাম ও ৬৪ গিগাবাইট ইন্টারন্যাল মেমরির ফোনটি ২৯ হাজার ৯৯০ টাকা এবং ৬ গিগাবাইট র্যাম ও ১২৮ গিগাবাইট ইন্টারন্যাল মেমরির ফোনটি কেনা যাবে ৩৫ হাজার ৯৯০ টাকায়।
এছাড়া ৪ গিগাবাইট সংস্করণের অপো এফ৭ পাওয়া যাবে তিনটি রঙে। অন্যদিকে ৬ গিগাবাইট সংস্করণ মিলবে দুইটি রঙে। চলুন দেখে নিই কী আছে এই স্মার্টফোনে।
ডিজাইন
যেকোনও ফোনে যদি খাঁজ থাকে তাহলে সেটি আপনার প্রথমে চোখে পড়বে। অপো এফ৭ এ তেমনটাই দেখা গেছে। অনেকেরই এটি দেখলে বিরক্ত লাগতে পারে। যেখানে বাজারের অন্যান্য স্মার্টফোনগুলো এই খাঁজ বর্জন করছে সেখানে অপোর এই ফোনে খাঁজ রাখার কারণটি জানা যায়নি।
উভয় সংস্করণে অ্যাক্রেলিক ব্যাক প্যানেল রয়েছে, কাঁচ নয়। বডির বাকি অংশ তৈরি হয়েছে প্লাস্টিকে। তবে ফিনিশিংটা দারুন ও চকচকে। তবে মুদ্রার যেমন উল্টো পিঠ থাকে, তেমন অ্যাক্রেলিক ব্যাক প্যানেল ও প্লাস্টিকে দাগ পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে আপনি যদি কেইস ব্যবহার না করেন তাহলে অপ্রত্যাশিত ক্ষতি হতে পারে।
স্মার্টফোনটি খুবই হালকা (১৫৮ গ্রাম) ও এর ডিসপ্লেতে একটি স্পষ্ট কালো বর্ডার রয়েছে যা বডি থেকে ডিসপ্লেকে দৃশ্যত আলাদা করেছে। আকর্ষণীয় ব্যাক প্যানেলেই নয়, এর যথেষ্ট মানানসই ফিঙ্গারপ্রিন্টও ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করবে।
ফোনটির পাওয়ার বাটন ও হাইব্রিড সিম স্লট ডানপাশে রয়েছে। বামপাশে রয়েছে ভলিউম বাটন। এছাড়া নিচের দিকে রয়েছে ৩.৫ এমএম অডিও জ্যাক, স্পিকার গ্রিল ও মাইক্রোইউএসবি পোর্ট। সেলফি ক্যামেরা ও ইয়ারপিসের জায়গাটিতে খাঁজ রয়েছে। পিছনে এলইডি ফ্ল্যাশসহ একটি ক্যামেরা, মাঝামাঝি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার ও অপো ব্র্যান্ডিং রয়েছে।
ডিসপ্লে
অপো এফ৭ এর ডিসপ্লে নি:সন্দেহে আলোচিত বিষয়। এতে রয়েছে ৬.২৩ ইঞ্চির ফুল এইচডি প্লাস আইপিএস স্ক্রিণ, যার রেজ্যুরেশন ২২৮০*১০৮০ পিক্সেল। এর ১৯:৯ অ্যাসপেক্ট রেশিও ব্যবহারকারীদের মুভি দেখার ক্ষেত্রে দারুন অভিজ্ঞতা দেবে। অন্যান্য ফুল স্ক্রিণ হ্যান্ডসেটের মতো অপো এফ৭ এ অন-স্ক্রিণ নেভিগেশন কী রয়েছে।
ডিসপ্লে সেটিংসে স্ক্রিণ ও ফন্ট সাইজের কালার টেম্পারেচার পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। যেসব অ্যাপস ফুল-স্ক্রিণ ডিসপ্লের উপযোগি নয় তার তালিকা দেখা যাবে। রয়েছে ‘নচ এরিয়া ডিসপ্লে’ বন্ধের সুযোগও।
অপো এফ৭ এর কালার রিপ্রোডাকশনের কারণে এর ছবি ও ভিডিও দেখতে অসাধারণ অভিজ্ঞতা পাবেন ব্যবহারকারীরা। এমনকি এর ভিউয়িং অ্যাঙ্গেলও দারুন। তবে সমস্যা হলো এর সানলাইট লেজিবিলিটি, ফুল ব্রাইটনেস দিয়েও সূর্যের আলোয় ভিডিও দেখা কষ্টকর।
পারফরমেন্স
স্মার্টফোনটিতে রয়েছে অক্টা-কোর মিডিয়াটেক হেলিও পি৬০ চিপসেট, যা এআই প্রসেসিং সমর্থিত। যদিও মিডিয়াটেকের সবচেয়ে ভালো প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে, তবে এই ব্র্যান্ডটি মূলত কমদামি ফোনের সাথে বেশি সংযুক্ত। বর্তমানে ভালোমানের স্মার্টফোনগুলোতে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। সেখানে অপো তাদের প্রথম ফ্লাগশিপ ডিভাইস থেকে পরবর্তী ডিভাইসগুলোতেও মিডিয়াটেক প্রসেসর ব্যবহার করে আসছে।
ফোনটি অ্যান্ড্রয়েড অরিও ৮.১ এর সাথে অপোর কালারওএস ৫.০ ইউআই-এ চলবে। ফোনটি অনেক কাস্টোমাইজেশন অপশন নিয়ে এসেছে।
মেমরি
আগেই বলেছি, নতুন এই ফোন দুই সংস্করণে পাওয়া যাবে। একটি ৪ গিগাবাইট র্যাম ও ৬৪ গিগাবাইট ইন্টারন্যাল মেমরির এবং আরেকটি ৬ গিগাবাইট র্যাম ও ১২৮ গিগাবাইট ইন্টারন্যাল মেমরিসমৃদ্ধ।
ক্যামেরা
সেলফি এক্সপার্ট ফোন, তাই এর ক্যামেরাতে চমক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এর সামনে রয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সমৃদ্ধ ২৫ মেগাপিক্সেলের সনি সেলফি ক্যামেরা। রয়েছে এফ/২.০ অ্যাপারচার ও সেন্সর এইচডিআর। ছবি সুন্দর করতে রয়েছে এআই বিউটি টেকনোলজি ২.০।
ফোনটির পিছনে রয়েছে ১৬ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। ফিচার হিসেবে রয়েছে এফ/১.৮ অ্যাপারচার, ফেইজ ডিটেকশন অটোফোকাস। ফলে ছবিতে আপনার বয়স কেমন দেখাচ্ছে সেটিও দেখতে পাবেন। তবে এখন কমদামি ফোনেও পিছনে দুইটি ক্যামেরা থাকছে, সেখানে অপোর একটি ক্যামেরা রাখা অনেককেই বিষ্মিত করেছে।
তবে ক্যামেরাতে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে অপো, এমনটা বলাই চলে। লো-লাইট শট, এলইডি ফ্ল্যাশ ব্যবহারে অ্যাকুরেট কালার পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য ক্যামেরার চেয়ে এগিয়ে আছে এর ক্যামেরা। রয়েছে বিল্টইন এআর স্টিকার, ফিল্টার সুবিধাও।
ব্যাটারি
ব্যাটারিতেও ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্ট রাখতে ফোনটিতে রয়েছে ৩৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি যা দিয়ে সারাদিন পার করা যাবে অনায়াসেই। যারা একটু কম ব্যবহার করেন তারা একদিনের বেশি চার্জ রাখতে পারবেন। তবে এতে ফাস্ট চার্জিং সুবিধা না থাকা হতাশাজনক।
আরও কিছু
ফোনটিতে রয়েছে লক স্ক্রিণ অপশন যা লক থাকা স্মার্টফোনেও ওয়ালপেপার পাল্টানোর সুযোগ দেয়। আপনি যখনই ফোনটি হাতে তুলবেন তখনই নতুন কিছু দেখতে পাবেন। পপআপ স্ক্রিণে ভেসে উঠবে অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা প্রকৃতির ছবি।
এছাড়া রয়েছে ‘কোয়াইট টাইম’ ফিচার যার মাধ্যমে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফোনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাইলেন্ট মোডে চলে যাবে। রয়েছে ফুল স্ক্রিণ মাল্টিটাস্কিং ফিচার।
নিরাপত্তার দিক থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারের পাশাপাশি রয়েছে ফেসিয়াল আনলক সুবিধাও। চোখের পলকেই ফেসিয়াল আনলক সুবিধায় ফোনটি আনলক হবে। যখন আপনি পাসওয়ার্ড বা ওটিপি-পিন দিতে যাবেন তখন এর সিকিউর কিবোর্ড সামনে আসবে। রয়েছে জনপ্রিয় ট্রুকলার অ্যাপের মতো কল আইডেন্টিফিকেশন, কল ব্লক সুবিধাও।
একনজরে ভালো দিক
* খুবই পাতলা
* ব্যাটারি লাইফ ভালো
* দ্রুতগতির সিপিইউ
* হাই-কোয়ালিটি সেলফি ক্যামেরা
একনজরে খারাপ দিক
* ফাস্ট চার্জিং না থাকা
* প্লাস্টিক বডি, সহজেই দাগ পড়তে পারে
* প্রিমিয়াম ভাবটা নেই