ব্যবসা শুরু করতে চান?

0
4451

সর্বপ্রথমে, কেন আপনি ব্যবসা করতে চান? তার কারণগুলো খুঁজে বের করুন। ব্যবসা করার স্বপক্ষে কমপক্ষে ৫টি শক্তিশালী যুক্তি দাঁড় করান।

কি ব্যবসা করবেন? এখানে ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে ভাবতে হবে। ভেবেচিন্তে আপনার অবস্থান থেকে ২/৩টি আইডিয়া নির্বাচন করুন।

আইডিয়াগুলো নিয়ে এবার একটু খেলা করতে হবে। প্রথমেই আপনি যে আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে চান সেই সেক্টরের কমপক্ষে ৩জন উদ্যোক্তাকে নির্বাচন করুন। একজনকে বেছে নিন যিনি বেশ প্রতিষ্ঠিত। আরেকজনকে নিন যিনি ৩ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করছেন, আরেকজন যিনি বছরখানেক হলো শুরু করেছেন।

এই তিনজনের সাথে নানান বিষয়ে সর্ম্পক গড়ে তুলুন। যোগাযোগ বাড়ান। তিনজনের ব্যবসায়িক মডেল, ম্যানেজমেন্ট স্টাইল, মার্কেটিং প্ল্যান ও স্ট্র্যাটেজি, সেলস গ্রোথ, কম্পিটিটর হ্যান্ডেলিং ইত্যাদি বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করুন।

এবার আপনার আইডিয়া নিয়ে তিনজনের সাথে আলাপ করুন। কে কী বলে মন দিয়ে শুনুন। যুক্তি তর্ক করুন। এবার আপনার মতো আপনি সিদ্ধান্ত নিন।

আপনি যে আইডিয়া নিয়ে ব্যবসা করতে চান তার সম্ভাব্যতা ও বাজার যাচাই করুন। বাজারের পরিধি নির্ধারণ করুন। টার্গেট কাস্টোমার নির্ধারণ করুন। এবার কাস্টোমারের কাছাকাছি গিয়ে আপনার পণ্য আর পরিসেবা নিয়ে কথা বলুন। মন দিয়ে কাস্টোমারের কথা শুনুন। সম্ভভ হলে ১০০ জনের মধ্যে একটা জরিপ করে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন।

প্রতিটি আইডিয়ার ক্ষেত্রেই এমনটা করুন। এবার সবগুলো আইডিয়ার মধ্য থেকে যেকোনও একটি আইডিয়াকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করে সেটি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

আইডিয়া নির্বাচন, প্রতিযোগী বিশ্লেষন এবং বাজার সম্ভাব্যতা ও বাজারের পরিধি যাচাই হয়ে গেলো। এবার আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করুন। ব্যবসার একটা ডেস্টিনেশন মডেল কল্পনা করুন। ৫ বছর পরে কতটুকু অর্জন করতে চান তা নির্ধারণ করুন। এবং এই ৫ বছরের পরিকল্পনাকে ভেঙে ১ বছর করে নিয়ে কাজ শুরু করুন।

ব্যবসা পরিকল্পনায় আর্থিক বিষয়ে যেসব ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব দিতে হবে: স্ট্যাবলিষ্টমেন্ট খরচ, মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং ব্যয়, রানিং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল, ব্যাকআপ মানি সোর্স ইত্যাদি।

স্টার্টআপ হিসেবে শুরুতে প্রচুর পরীক্ষা-নিরিক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ভাববেন একরকম, হবে আরেক রকম। খরচ যা অনুমান করবেন তার থেকে অনেক গুণ বেড়ে যাবে। অতএব শুরুতেই বেশ হিসাব করে পরিকল্পনার বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে হবে।

ব্যবস্থাপনায় যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে: দক্ষ কর্মী নির্বাচন, কর্মী ব্যবস্থাপনা, সময় ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, বিক্রয় ও বিপণন ব্যবস্থাপনা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, গ্রাহক সেবা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।

ব্যবসা পরিকল্পনার শুরুতেই জোর দিন মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিংয়ে। মোট বিনিয়োগের শতকরা ৬০ ভাগ বাজেট বরাদ্দ করেন এই সেক্টরের জন্যে। মার্কেটিং আপনার ব্যবসার ব্লাড সার্কুলেশনের মতো। এটি ব্যহত হলে বাকি সব বিভাগ অকার্যকর হয়ে পড়বে। আর ব্র্যান্ডিং আপনাকে বাজারে টিকে থাকতে খুঁটির মতো সহায়তা করবে।

গ্রাহক সেবাতে সর্বাধিক পরিমানে গুরুত্ব দিন। মনে রাখতে হবে, গ্রাহক ব্যবসার জন্যে লক্ষীর মতো। গ্রাহকের সন্তুষ্টতাই আপনাকে ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি এনে দিবে।

ব্যবসার লিগ্যাল ডকুমেন্টেশনের দিকে জোর দিন। এই বিষয়ে কোনও গাফিলতি নয়। একটু খরচ করে হলেও ব্যবসা ছোট বড় যেমনই হোক না কেনো লিগ্যাল কাগজপত্র শুরুতেই গুছিয়ে নিয়ে শুরু করুন।

আপনার আইডিয়া অনুযায়ী যে পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসা করতে চান তা নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করুন। পড়াশোনার কোনও বিকল্প নেই। যোগাযোগ বাড়ান। নিজেকে সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করুন।

এই পর্যায়ে এসে নিজের দক্ষতা আর যোগ্যতা যাচাই করুন। যেসব বিষয়ে দূর্বলতা আছে সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন। নিয়মিত পড়ালেখা করুন। প্রচুর তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করুন এবং এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করুন।

এখন সময় হয়েছে পথে নামার। আপনার গন্তব্য খুঁজে নিতে আপনি মোটামুটি প্রস্তুত। চলার পথের চড়াই উৎরাই পার হয়েই গন্তব্যে পৌছুতে হবে। তবে ঐসব প্রতিবন্ধকতার জন্য আপনি মোটামুটি একটা ধারণা ও মানসিক প্রস্তুতি আগেই নিয়ে নিয়েছেন। শুরু করে দিন আপনার স্বপ্নযাত্রা।

লেখক : সাজ্জাত হোসেন একজন উদ্যোক্তা, মেন্টর, কনসালট্যান্ট ও বিজনেস কোচ। তিনি নির্ভেজাল ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। একইসাথে রেডজোনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, বিডিওএসএনের এন্টারপ্রেওনারশীপ কো-অর্ডিনেটরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন