ধরে নেয়া হয় ১৮ শতকের শুরুর দিকে ইংল্যান্ডে রাগবি খেলার প্রচলন হয়। ইংল্যান্ড থেকে ধীরে ধীরে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে রাগবি ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স,যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলোয় রাগবি খুব জনপ্রিয়।
ফুটবলের মতো রাগবিতে দুই দল একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। একটি দলে ১৫ জন করে খেলোয়াড় থাকে এবং ৭ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় থাকে। ম্যাচ পরিচালনার জন্য একজন মাত্র রেফারি থাকে। রাগবির মাঠ চতুর্ভুজ আকৃতির আর বল অনেকটা ডিম্বাকৃতির। মাঠের উভয় অংশের শেষ প্রান্তে খুঁটি দিয়ে গোলপোস্ট তৈরী করা হয় যা দেখতে ইংরেজি এইচ (H) অক্ষরের মতো। এক দলের খেলোয়াড় দ্বারা মাঠের মাঝখান বলে লাথি অথবা কিক মারার মাধ্যমে খেলা শুরু হয়। রাগবি খেলায় সামনের দিকে পাস দেয়া যায় না। পেছনের সতীর্থ খেলোয়াড়কে পাস দিতে হয়। তবে বলকে নিজের কাছে রেখে দৌড়ে অথবা কিকের মাধ্যমে সামনে নেয়া যাবে। একটি দল অপর দলের গোললাইনের সীমানায় বল স্পর্শ করলে দলটি পাঁচ পয়েন্ট পাবে। একে বলা হয় (Try)। খেলা ৪০ মিনিট করে মোট ৮০ মিনিটে হয়ে থাকে।
রাগবির অভিভাবক সংস্থা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল রাগবি বোর্ড। প্রতি চার বছর অন্তর এ রাগবি ইউনিয়নভূক্ত দলগুলো নিয়ে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। যা ওয়েব এলিস কাপ ট্রফি বা রাগবি বিশ্বকাপ নামে পরিচিত। রাগবির উদ্ভাবক উইলিয়াম ওয়েব এলিসের নাম অনুসারে রাগবি বিশ্বকাপ ট্রফির নাম করন করা হয়। ১৮২৩ সাল, এলিস তখন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত রাগবি স্কুলে অধ্যয়নরত। বলা হয় থাকে, এলিস রাগবির পূর্বের সব নিয়ম কানুন ভেঙে বল নিয়ে দৌড়ানো শুরু করেন। তখন থেকে রাগবির সূচনা। ইন্টারন্যাশনাল রাগবি বোর্ড এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করে থাকে।
১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মতো রাগবি বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়। আয়োজক দেশ ছিল যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। মোট ১৬ টি দল বিশ্বকাপে অংশগ্রহন করে। প্রতিযোগিতয় বিজয়ী হিসেবে নিউজিল্যন্ড রাগবি বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তোলে।
১৯৯১ সালে পরবর্তি রাগবি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় যৌথভাবে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়ালেসে। ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে চূড়ান্ত বিজয়ী হয় অস্ট্রেলিয়া। সেবারও ১৬ টি দল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে।
এরপর ১৯৯৫ সালে শেষ বারের মতো ১৬ দলের অংশগ্রহণে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। তারপর, বিশ্বকাপ ২০ দলের অংশগ্রহণে আয়োজিত হয়েছে মোট ৬ বার, যথাক্রমে ১৯৯৯ সালে, ২০০৩ সালে, ২০০৭ সালে, ২০১১ সালে এবং ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডে। তার মধ্যে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সর্বশেষ দু’বারই নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ তুলে ধরার সৌভাগ্য হয়েছে।
বর্তমানে যে রাগবি বিশ্বকাপ ট্রফিটি আছে তার উচ্চতা ৩৮ সেন্টিমিটার যা অনেকটা ফুটবল বিশ্বকাপ ট্রফির মতো। সম্পূর্ণ রূপার তৈরি হলেও ওয়েব এলিস কাপ ট্রফিটি সোনায় মোড়ানো এবং দেখতে সোনার মতোই উজ্জ্বল। রাগবি বিশ্বকাপের প্রথম আসর থেকেই ওয়েব এলিস কাপ ট্রফিটি বিজয়ী দলের হাতে তুলে দেয়া হয়।
দুই হাতল বিশিষ্ট এই ট্রফি তৈরি হয় ১৯০৬ সালে লন্ডনের জেরার্ডের হাতে। ওয়েব এলিস কাপ ট্রফিটি আসলে বিখ্যাত ইংরেজ ডিজাইনার পল ডি লামেরির ১৭৪০ সালে করা একটি কাপের ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়। ট্রফিটির একদম শীর্ষে রয়েছে একটি ক্ষুদ্র আনারস যা একধরনের প্রতীক বহন করে। ১৪৯৩ সালে স্পেনের নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস প্রথম ইউরোপে আনারস নিয়ে আসেন। সেই থেকে আনারস আতিথেয়তা এবং উদযাপনের প্রতীক যা ওয়েব এলিস কাপ ট্রফিটি কে করেছে অনন্য।