আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো অস্ট্রেলিয়ার অ্যাবোরোজিনদের সম্পর্কে।
অ্যাবোরোজিন বলতে মূলত অস্ট্রেলিয়ার আদি অধিবাসীদেরকে বুঝায়। অর্থাৎ ইউরোপিয়ানরা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করার অনেক আগে থেকেই তারা এখানে বাস করে আসছে। ধারণা করা হয়, প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার বছর আগে এরা এশিয়া থেকে অভিবাসন করে অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে পৌঁছেছে।
অ্যাবোরোজিন বলতে প্রায় ৫০০ গোত্রকে একত্রে বোঝায়। এদের মধ্যে অ্যাবোরোজিনাল অস্ট্রেলিয়ান, অ্যাবোরোজিনাল তাসমানিয়ান এবং ভিক্টোরিয়ান অ্যাবোরোজিন সবচেয়ে বড়। এদের আবাসস্থল, ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যেও বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
অস্ট্রেলিয়ান সরকারের সাম্প্রতিক জরীপ অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ অ্যাবোরোজিন বাস করে যা দেশটির জনসংখ্যার ২ শতাংশ।
ইউরোপিয়ানদের আগমনের পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সব অঞ্চল জুড়েই অ্যাবোরোজিনদের দেখা পাওয়া যেত বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থানে।
কিন্তু ১৮শ শতকে ব্রিটিশরা এসে তাদের সব জমি দখল করে নিতে শুরু করে। ফলে অ্যাবোরোজিনরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু তাই নয়, ইউরোপিয়ানদের আগমনের কারণে অ্যাবোরোজিনদের মধ্যে কিছু ভয়াবহ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এসব রোগের কারণে পরবর্তী ১০০ বছরে অ্যাবোরোজিনদের সংখ্যা ১০ লাখ থেকে কমে মাত্র ৬০ হাজারে এসে দাঁড়ায়।
অ্যাবোরোজিনদের মধ্যে গোত্রবিভেদ থাকলেও তাদের মধ্যে বিশ্বাস, আচরণ ও জীবনধারণে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পৃথিবী সৃষ্টির সময়কে অ্যাবোরোজিনরা ‘স্বপ্নের সময়’ বলে ডাকে। তাদের ধারণা, সেসময় তাদের পূর্বপুরুষরা মাটির নীচ থেকে উঠে এসেছিল এবং পানি, আকাশ, প্রকৃতি, জীবজন্তু এসব সৃষ্টি করেছিল। তাদের কোন কোন পূর্বপুরুষ এখনো প্রকৃতির মাঝে জীবিত আছে বলে তারা মনে করে। তবে তাদের কাছে মানবজাতির স্থান অন্য যে কোন প্রাণীর চাইতে অনেক উঁচুতে।
এসব কাহিনী অ্যাবোরোজিনদের মুখে মুখে চলে এসেছে শত শত বছর ধরে, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে। এসব কাহিনী বর্ণনা তাদের সংস্কৃতিরই একটি অংশ। অ্যাবোরোজিনরা ভাস্কর্য তৈরি করে, পাথরে ছবি আঁকা, খোদাই করা এবং ঝুড়ি ও পুঁতির মালা তৈরিতে তারা বেশ দক্ষ।
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে অ্যাবোরোজিনরা অত্যন্ত অবহেলিত জীবন যাপন করছে। যদিও কিছু আইন করে তাদের জমি এবং সমঅধিকার ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু প্রয়োজনের তুলায় সেটা খুবই অপ্রতুল। এখনও অ্যাবোরোজিনদের বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হয়। প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হতে হয়। তাদেরকে মানবিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক থেকেও সমান অধিকার প্রদান করা হয় না।