আকাশে ধুলোমাখা পথ

বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসে প্যারেড গ্রাউন্ডের ওপর দিয়ে বিমান বাহিনীর মহড়াতে আমরা প্রায়ই দেখি যে যুদ্ধবিমানগুলো প্রচণ্ডবেগে উড়ে যাচ্ছে আর পেছনে লেজের মতো বিভিন্ন রঙ রেখে যাচ্ছে। আসলে এগুলো গ্যাস ছাড়া আর কিছুই না, বিশেষ ধরণের রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে এদের রঙ্গিন করা হয়। সাধারণত যুদ্ধবিমানগুলোর পেছনেই আমরা এমন লেজ দেখতে পাই, কিন্তু সাধারণ যাত্রীবাহী বিমানগুলোর পেছনে এগুলো দেখা যায় না।

এই বাস্পীয় লেজগুলোর নাম হচ্ছে 'Contrail ', বাষ্পীয় লেজ বা কন্ট্রেল একধরণের লম্বা কৃত্রিম মেঘ যা মাঝে মাঝে বিভিন্ন আকাশযানের পিছনে চলার সময় তৈরি হয়। এটি গঠিত হয় মূলত আকাশযানের ইঞ্জিন থেকে নির্গত গ্যাসের ভিতর থাকা পানির কণা দ্বারা। আকাশযানের চলাচলের পথের উচ্চতায় (প্রায় ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার ফিট) তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এসবের উপর ভিত্তি করে এর স্থায়িত্ব কয়েক সেকেন্ড, মিনিট বা কয়েক ঘন্টাও হতে পারে এবং দৈর্ঘ্য কয়েক মাইল পর্যন্ত হতে পারে।

অনেকে মনে করেন যে কন্ট্রেল আসলে বিমান থেকে বের হওয়া ধোঁয়া, আসলে তা ঠিক নয়, বলা যায় এটা এক রকমের কৃত্রিম মেঘ। বিমান যখন প্রচণ্ড বেগে ছুটে যায়, তখন এর ইঞ্জিন থেকে জ্বালানী পুড়ে প্রধানত কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্প তৈরি করে। এই জলীয় বাষ্প এত বিশাল উচ্চতায় ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়, যা পরবর্তিতে এই কৃত্রিম মেঘ তৈরি করে।

বাতাস যত বেশী আর্দ্র হবে, অর্থাৎ বাতাসে যত বেশী জলীয় বাষ্প থাকবে, তত বেশী Contrail তৈরি হবে। Contrail তৈরি হওয়াটা অনেক কিছুর ওপরে নির্ভর করে, আর এসব কারণেই আমরা কোন কোন বিমানের পেছনে লেজ দেখতে পাই, আবার কোনটার পেছন পাই না। Contrail তৈরি হওয়ার পেছনে সর্বপ্রথম দায়ী হল বিমানের উচ্চতা। বিমান যত উঁচুতে থাকবে, তত বেশী এটি বায়ুমণ্ডলের ঠাণ্ডা স্তরে পৌঁছাবে, এবং বাতাসের জলকণাগুলো জমতে থাকবে। এর পরে প্রয়োজন হল বিমানের গতি। বিমান যত দ্রুত চলবে, তত বেশী এর ইঞ্জিনের শক্তি ক্ষয় হবে এবং জ্বালানী পুড়ে গ্যাস নির্গত হবে। বাতাস যদি শুকনো থাকে, তাহলে বিমান যত দ্রুতই চলুক না কেন, কোন Contrail দেখা যাবে না।

ধরা যাক, একটি বোয়িং ৭০৭ এবং এয়ারবাস A340 ৩৩০০০ ফিট উঁচুতে উড়ছে। দুটি বিমান একই উঁচুতে, বাতাসের একই অবস্থায় ছুটে চলার সত্ত্বেও দুটির পেছনে একই পরিমাণে Contrail তৈরি হবে না। বোয়িং ৭০৭-এর ইঞ্জিন বেশ পুরনো মডেলের, তাই এর ইঞ্জিনের তাপমাত্রা বেশী থাকে, যার কারণে এর থেকে নির্গত গ্যাস জলকণাকে খুব একটা জমাট বাঁধাতে পারে না। আবার এয়ারবাস A340-এর ইঞ্জিন নতুন মডেলের হওয়াতে এর ইঞ্জিনের তাপমাত্রা বেশ কম থাকে এবং তাই এর থেকে নির্গত হওয়া গ্যাস সহজেই Contrail তৈরি করতে পারে।

আবার একই ইঞ্জিন থাকা সত্ত্বেও উচ্চতা ভিন্ন হওয়ার কারণে সৃষ্ট কন্ট্রেলও ভিন্ন মাপের হবে। বায়ুমন্ডলের উপরের স্তরে তাপমাত্রার এতো বেশী তারতম্য ঘটে যে মাত্র কয়েক ফিটের জন্যেও আর্দ্রতা ভিন্ন হয় এবং কন্ট্রেল কম অথবা বেশী তৈরি হয়।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন