বিচিত্র নাম বাহারি রঙ

প্রজাপতির ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই (butterfly) তা তো সবাই জানে। কিন্তু আমি যদি বলি ‘ফ্লাটারবাই’।

তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবে না।

কিন্তু আসলে কি জানো অনেক আগে প্রজাপতিকে ‘ফ্লাটারবাই’ নামেই ডাকা হতো এখন অবশ্য সবাই বাটারফ্লাই নামেই চেনে। প্রজাপতির গায়ের রঙ মাখনের মতো।

অনেকের বিশ্বাস, মাখন রঙের মাছি অর্থাৎ বাটার-কালারড-ফ্লাই থেকেই বাটারফ্লাই শব্দটির জন্ম। আবার প্রাচীন ইংরেজি ভাষায় ‘বাটারফ্লাই’ শব্দটিকে বলা হতো ‘বাটারফ্লোয়েজ’।

প্রাচীন ডাচ ও জার্মান ভাষায় বলা হতো ‘বাটারফ্লিয়েজ’। সব শব্দের অর্থ কিন্তু একই-বাটারফ্লাই। জার্মান ভাষায় বাটারফ্লাইয়ের আরেক নাম হলো ‘মিলচদিয়েব’।

এই শব্দটির ইংরেজি রূপ হলো ‘মিল্ক-থিফ’। স্পেন ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে প্রজাপতিকে ডাকা হয় ‘ম্যারিপোসাস’। পর্তুগাল ও ব্রাজিলে ডাকা হয় ‘বরবোলেটাস’।

ফ্রান্সে ‘প্যাপিললনস’, রাশিয়ায় ‘ব্যাবোচকা’, আমেরিকায় ‘টিটারনিগ’ ও নাইজেরিয়ায় ডাকা হয় ‘ওলুকওলোমবুকা’ নামে।

প্রজাপতি Lepidoptera বর্গের এক ধরণের পতঙ্গ। পৃথিবীতে যাদের আবির্ভাব ঘটেছিল প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন বছর আগে। এই বর্গের অধীনে সাতটি পরিবার আছে এবং প্রতি পরিবারেই ভিন্ন ধরণের প্রজাপতি দেখা যায়।

প্রজাপতির জীবন
সবচেয়ে কম আয়ু নিয়ে জন্মায় পতঙ্গ শ্রেণীর প্রাণী। কেউ দুই সপ্তাহ বাঁচে তো কেউ দুই বছর।

আবহাওয়া ও খাদ্যের প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে প্রজাপতির বেঁচে থাকার সময়টা।

একটি পূর্ণবয়স্ক প্রজাপতি গড়ে দুই সপ্তাহ বাঁচলেও কোনো কোনো প্রজাপতি, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার হেলিকোনিয়াস এরাটো, টাইগেটিস মারমেরিয়া এবং ইউরোপের গোনেপটেরিক্স আরহামনি নামের প্রজাপতি বাঁচে এক বছরের কিছু কম সময়।

জীবনচক্র
প্রজাপতির জীবনচক্রে কিন্তু চারটি ধাপ থাকে। এগুলো হচ্ছে ডিম, ক্যাটারপিলার, পিউপা এবং পরিণত প্রজাপতি। স্ত্রী প্রজাপতি সাধারণত পাতার ওপরে ডিম পাড়ে। তবে এই পাতা ঠিক করার ব্যাপারে অনেক শর্ত আছে।

ডিম থেকে ক্যাটারপিলার অবস্থায় পরিণত হবার পরে ওই অবস্থায় এদের খাদ্যের ওপরে ভিত্তি করেই মা প্রজাপতি পাতা বাছাই করে। ডিমগুলো পাতার উপর আঠা জাতীয় পদার্থ দিয়ে যুক্ত থাকে যার কারণে ডিমগুলো নীচে পড়ে না।

ডিম থেকে ক্যাটারপিলারে পরিণত হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। ক্যাটারপিলারদের বৃদ্ধির হার অনেক দ্রুত হয় এ কারণে এদের অনেক খাবারের প্রয়োজন হয়। এরা শুধু খেতেই থাকে ফলে এদের বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হয়।

ক্যাটারপিলার থেকে পিউপাতে পরিণত হতে কমপক্ষে পাঁচদিন সময় লাগে। পিউপা হতে পরিণত প্রজাপতিরূপে বের হতে প্রায় দু’সপ্তাহ সময় লাগে।

যা খায়
প্রজাপতি ফুল থেকে ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু খায়। কোনো কোনো প্রজাপতি খায় গাছের রস, পঁচা ফল, এমনকি গোবরের রস। তবে প্রজাপতি যাই খায় সেটা অবশ্যই তরল হতে হয়।

কিন্তু প্রজাপতির বাচ্চারা একেবারে উল্টো। ওরা খায় কঠিন খাবার। বিশেষ করে গাছের পাতা, এমনকি ফল কামড়ে খেয়ে ওরা বড় হয়।

প্রজাতির রকমফের

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া গেছে প্রায় ১৭ লাখ প্রজাতির প্রাণীর। তার মধ্যে প্রজাপতি ও মথের সংখ্যা দুই লাখ ৫৩ হাজার ৬৮০।

অন্যদিকে ১৯৯২ সালে প্রকাশিত ‘বাটারফ্লাইজ অব মেক্সিকো অ্যান্ড ইউএসএ’ নামের একটি বইয়ে বলা হয়েছে, প্রজাপতি ও মথের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার ৭৫০।

আবার ২০০৭ সালে প্রকাশিত এড্রিয়ান হসকিন্সের লেখা ‘ওয়ার্ল্ড বটারফ্লাই সেনসাস’ নামের বইয়ে প্রজাপতি ও মথের প্রজাতির সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ৬৫৭। আসল কথা হলো, প্রজাপতি ও মথের মোট সংখ্যা কত, এটা সঠিক করে বলা এখনো সম্ভব হয়নি।

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যে প্রজাতির প্রজাপতি, তার নাম পেইন্টেড লেডি ভ্যানেসা কারদুই।

পুরুষ ও নারী
কিছু প্রজাতিতে একেবারে স্পষ্ট পার্থক্য বোঝা যায় নারী এবং পুরুষের মাঝে। যেমন Polyommatinae প্রজাপতির পুরুষের পাখার রঙ উজ্জ্বল নীল।

কিন্তু নারীর রঙ আবার একটু গাঢ় আর পাখার প্রান্তে বাদামী দাগ থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির পুরুষের পাখায় গাঢ় রঙের ডোরাকাটা থাকে।

এ ছাড়াও পুরুষ প্রজাপতির ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনাচে পাখা, লম্বাটে সরু শরীর এবং নারী প্রজাপতির চাইতে উজ্জ্বল পাখা। পুরুষ প্রজাপতি বেশি উড়াউড়ি করে। নারী প্রজাপতি লুকিয়ে থাকতেই পছন্দ করে।

কত উঁচুতে উড়ে
সবচেয়ে বেশি উঁচুতে উড়তে পারা প্রজাপতির নাম স্যাটাইরিন প্যারালেসা নেপালিকা। এর সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৮৩ সালে। নেপালের ‘সেই ফোকসুন্দ ন্যাশনাল পার্ক’-এর ১৪ হাজার ৮০০ ফুট ওপরে সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল এ প্রজাপতিটির।

আনকমপাহগ্রে ফ্রিটিলারি বোলোরিয়া ইমপ্রোবা অ্যাক্রোনেমা নামের আরেকটি প্রজাপতি জীবনের বেশির ভাগ সময় পার করে ভূমি থেকে প্রায় ১৪ হাজার ২০০ ফুট ওপরে।

বড় ও ছোট প্রজাপতি
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রজাপতির নাম কুইন আলেক্সান্দ্রাস বার্ডউইং। এদের পাখা মেলে এক ফুট বা ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। পাপুয়া নিউগিনির কদল বনে এদের দেখা যায়। আর বিশ্বের সবচেয়ে ছোট প্রজাপতি হচ্ছে ওয়েস্টার্ন পিগমি ব্লু। এদের আবাস আফ্রিকায়।

এ প্রজাপতিরা পাখা মেলে আধা ইঞ্চিরও কম।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন