শীতের পাখি দেখা

শীতের এই সময়ে একদিনের জন্য বেড়িয়ে আসতে পারেন ঢাকার কাছেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসতে পারেন। দেশের একমাত্র আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে এখন শীতের পাখির মেলা। তীব্র শীতের দেশ থেকে পরিযায়ী পাখিরা হাজার হাজার মাইল পথ উড়ে এসে এখন আশ্রয় নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবজু ক্যাম্পাস জুড়ে থাকা লেকগুলোতে।

তাদের উড়ে চলা, মাছ শিকার করা আর মধুর কলরব শুনতে চাইলে এখনই সময় করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কেননা শীত শেষ হলেই পরিযায়ী পাখিগুলো উড়ে চলে যাবে নিজেদের দেশে। আর তাছাড়া নগরের একটু দূরের এই ক্যাম্পাসে গেলে গ্রামীন পরিবেশের সঙ্গে শীতের আসল রুপটাও দেখতে পাবেন কাছ থেকে। সকালবেলা তো বটেই বিকেল হতেই এখানে নেমে আসে কুয়াশার ছায়া।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাধারগুলোতে প্রায় সারা বছরই পানি থাকে। এসব জলাধারগুলো বিভিন্ন রকম জলজ উদ্ভিদ আর শৈবাল দিয়ে ঢাকা থাকে। বেশিরভাগ জলাধারগুলোতে ফুটে থাকে সাদা ও গোলাপী রংয়ের শাপলা। জলাধারগুলোও মাছের অভয়ারণ্য। এসব লেকে পর্যাপ্ত খাদ্যেও পাশাপাশি আশেপাশে জনবসতি কম বিধায় লেকগুলোকে নিরাপদ মনে করে প্রতিবছরই এখানে এসে আশ্রয় নেয় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি।

কী কী পাখি দেখতে পাবেন
ক্যাম্পাসে সারা বছরই থাকে এমন পাখির রয়েছে সরালী, কাঠঠোকরা, ছোট বসন্ত বাউরী, হুদহুদ, নীলকণ্ঠ, সুুঁইচোরা, চাতক, কুম্বা, কানাকুয়া, পাপিয়া, বউ কথা কও, কোকিল, টিয়া, আবাবিল, চোখ গেল, নাক্কাটি, পেঁচা, রাতারা, ঘুঘু, কবুতর, ডাহুক, চিল, বাজপাখি, পানকৌড়ি, বক, শামুকডাহা, হাড়িচাচা, ফটিকজল, হলদে পাখি, ফিঙ্গে, লাটোরা, গুদহুকা, সাতসাইলি, কাঠকসাই, দোয়েল, শালিক, কমলা মাথা পাহা, বুলবুলি, নীলটুনি, মৌটুসি, ফুলঝুরি, মুনিয়া, বাবুই পভৃতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের বিপরীতে লেকের পাড়ে এবং পরিবহন এলাকার পাশের জলাশয়ে পরিযায়ী পাখির মধ্যে রয়েছে কয়েক প্রজাতির হাঁস, সাখতা, কাদাখোচা, মেঠো কাঠঠোকরা, বনছাহা, বাটান, জিরিয়া, খয়েরি ঈগল, মেঠোচিল, বাদামি কসাই পাখি, ধূসর ফিঙ্গে, লালবুক চটক, নীল কণ্ঠ, মাছমুরলি, বাজ পাখি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শুমারি মতে, বছরে ক্যাম্পাসে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার অতিথি পাখি আসে।

এছাড়া সারাদেশেই বিপন্ন এমন কিছু পাখির দেখা মেলে ক্যাম্পাসে। যেমন জলপিপি, কালিম, ডাহুক, ভুতুম পেঁচা, বোঁচা হাঁস এবং যাপ পাখি। এছাড়াও ক্যাম্পাসে নিমপোখ, মাছরাঙ্গা, শামুকডাহা, হলুদ লতিক, হট.টি.টি, রহিলা চ্যাগা, ধূসর মাথা কূড়া ঈগল পাওয়া যায়।

একটু নজর রাখলেই মিলতে পারে দূরন্ত গতিতে এগাছ থেকে ওগাছে লাফিয়ে বেরানো কাঠবেড়ালির দেখা।

কোথায় দেখবেন এসব পাখি
শীতের পরিযায়ী পাখির উড়াউড়ি দেখতে চাইলে সোজা চলে যেতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের দিকে জলাধারগুলোতে। আর সাধারণ পাখির দেখা মেলে পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই। পাখি দেখতে একটু একটু সকাল সকাল হাজির হতে হবে লেকের ধারে। পাখিরা বিরক্ত হয় এমন কিছু করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন।

আরো যা কিছু
এই বিশ্ববিদ্যালয়েই অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু শহীদ স্তম্ভ। ৫২’র ভাষা আন্দোলন এবং ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হিসেবে ৫২ ফুট ব্যাস এবং ৭১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট শহিদ মিনারটির স্থপতি রবিউল হুসাইন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল ফটক থেকে সামনে তাকালেই চোখে পড়বে সবচেয়ে উচু শহিদ মিনারটি।

JU
ছবি : সংগৃহীত

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে স্থপতি হামিদুজ্জামানের ‘সংশপ্তক’ এবং সমাজবিজ্ঞান ভবনের সামনে স্থপতি হামিদুর রহমানের ‘অমর একুশ’ ভাস্কর্য রয়েছে। সময় করে এগুলো দেখে আসতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির বটতলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান।

দেশি খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে স্বপরিবারে বসে যেতে পারেন যেকোনো একটিতে। এসব দোকানে মোটামুটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশে টাটকা মাছ, সবজির অনেক পদের দেশি খাবার পাওয়া যায়।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ দেখে যদি আপনার হাতে আরো কিছুটা সময় থাকে তাহলে সবাই মিলে চলে যেতে পারেন ক্যাম্পাস থেকে সামান্য দূরত্বে অবিস্থত জাতীয় স্মৃতিসৌধ দেখতে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুলগেট থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছতে বাসে সময় লাগবে ৫ থেকে ৬ মিনিট।

National Martyrs' Memorial
ছবি : সংগৃহীত

স্মৃতিসৌধ দেখা শেষ হলে মূলগেট থেকে বের হলেই হাতের বায়ে আরিচা রোডের উল্টোদিকে রয়েছে কারুপল্লী মেলা নামে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের  অনেকগুলো দোকান। সময় থাকলে একবার সেখানে ঢুঁ মারতে পারেন। মাটির তৈরি নানান রকম তৈজসপত্রের দেখা পাবেন এখানে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন