পৃথিবীর যমজ বোন

ভেনাস বা শুক্র গ্রহকে বলা হয় পৃথিবীর যমজ বোন। কারণ পৃথিবী এবং শুক্রের মধ্যে গাঠনিক উপাদান এবং আচার-আচরণে বড় রকমের মিল রয়েছে।

এ কারণে ১৯৬০ সালের পর থেকে নাসা, সোভিয়েত স্পেস প্রোগ্রাম, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি মিলে প্রায় ৪০টি মহাকাশযান পাঠিয়েছে যেগুলো এই গ্রহ নিয়ে গবেষণা করেছে।

কিন্তু মিল থাকলেও এই গ্রহে বসবাস করা মানুষের পক্ষে সম্ভব না। সূর্য থেকে দূরত্বে ২য় গ্রহ হওয়ায় এই গ্রহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক রকমের বেশি।

এতোটাই বেশি যে এই গ্রহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা সীসাকে গলিয়ে ফেলতে সক্ষম। মানুষ এখন পর্যন্ত এমন কোন প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে পারেনি যা দ্বারা এই গ্রহে বাস করা সম্ভব হতে পারে।

শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠদেশ সৌর জগতের অন্যান্য গ্রহ থেকে একেবারেই আলাদা। এর পৃষ্ঠদেশ পাহাড়, হাজার হাজার আগ্নেয়গিরি আর আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে পরিপূর্ণ। তবে ভেনাসের পৃষ্ঠদেশের দুই-তৃতীয়াংশ সমতল যেখানে হয়তোবা মানুষের বাস করা সম্ভব হতে পারে।

শুক্র গ্রহের উপর হাঁটতে গেলে সে অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হবে না। গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে এর পৃষ্ঠদেশ খুবই শুষ্ক। সেই সাথে এর বায়ুমণ্ডলে রয়েছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পুরু আস্তরণ যার ফলে তাপমাত্রা এই গ্রহ থেকে বের হতে পারে না। এ কারণে এই গ্রহের তাপমাত্রা থাকে ৪৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শুক্র গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর ৯১ শতাংশ। সুতরাং সেখানে একটু বেশি উঁচুতে লাফ দেয়া যাবে এবং জিনিসপত্র তুলনামূলক হালকা মনে হবে। তবে মাধ্যাকর্ষণের পার্থক্য খুব একটা অনুভব করা না গেলেও এই গ্রহের ঘন বায়ুমণ্ডলের কারণে নড়াচড়া করাটা কিছুটা কষ্টকর হবে। এখানকার বাতাস এতোটাই পুরু যে দ্রুত হাত নাড়াতে গেলে বেশ বাধা অনুভূত হবে। মনে হবে যেন পানির মধ্যে আছি।

একই সাথে বায়ুমণ্ডলের যে চাপ সেটাও অনুভূত হবে বেশ ভালোভাবেই। পৃথিবীতে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতায় প্রতি বর্গইঞ্চিতে চাপ ১৪.৫ পাউন্ড বা ১ বার। ভেনাসে এই চাপ ৯২ বার। পৃথিবীতে এই চাপ অনুভব করতে হলে সমুদ্রের ৩ হাজার ফুট নিচে যেতে হবে।

শুক্র গ্রহের ২২৫ দিন লাগে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে আর ২৪৩ দিন লাগে নিজ অক্ষের উপর একবার আবর্তিত হতে।

পৃথিবীতে আকাশের রং নীল দেখা গেলেও ভেনাসে আকাশের রং লালচে কমলা। এর বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিক্ষিপ্ত উপস্থিতির কারণে সূর্যরশ্মি তাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে এরকম বর্ণের সৃষ্টি করে। এখানে সূর্যকে স্পষ্ট দেখা যায় না, বরং ঘন মেঘের মধ্য দিয়ে হলদে আভা হিসেবে চোখে পড়ে সূর্যকে।

শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলে বাতাস প্রতি ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় যা পৃথিবীতে কোন ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগের চেয়েও বেশি। তবে গ্রহটির পৃষ্ঠদেশে ৩ কিলোমিটার/ঘণ্টায় বায়ু প্রবাহিত হয়।

ভেনাসে কখনও ভূমিকম্প হয় না। কেননা ভূমিকম্প হওয়ার জন্য টেক্টোনিক প্লেট নেই এই গ্রহে। এছাড়াও এই গ্রহে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে। আর প্রচুর সংখ্যক জীবন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে ক্রমাগত লাভা বের হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন