খেলার মাঠে উন্মাদনাঃ পর্ব ৩

খ্রিষ্টের জন্মেরও ৭৭৬ বছর আগে প্রাচীন গ্রীসে প্রথম আন্তঃদেশীয় খেলার সূচনা হয়। বিশাল প্রাচীরে ঘেরা একই ময়দানে খেলতো বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন প্রান্তের খেলোয়াড়েরা। দিন বদলের সাথে সাথে বদলে গেছে খেলার ধরন, রীতিনীতি, এমনকি খেলার পরিসরও আজ দিগন্ত বিস্তৃত। সে সময় এক মাঠে ৩০/৪০ খেলা হতো, আর এখন প্রতিটি খেলার জন্যে আলাদা আলাদা মাঠ, আলাদা সময়।

কিছু খেলা আছে ইনডোর। ঘরের কোনে বসেও মজা করে সময় কাটানোর জন্যে এ খেলার উদ্ভব। বাকি যে আউটডোর খেলা গুলো আছে, সেগুলোরও রয়েছে অনেক ধরণ। এই যেমন, ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল, ভলিবল,  হ্যান্ডবল ইত্যাদি খেলা অনুষ্ঠিত হয় নির্দিষ্ট আকারের একটি মাঠে। আবার সেই মাঠের চারপাশে টার্ফ বসিয়ে সাইক্লিং, দৌড় সহ নানারকম খেলা আয়োজন করা হয়। আজ আমরা এরকম কিছু খেলার ব্যাপারে জানবো, যেগুলো ঘরে বসে কিংবা মাঠের সীমানার ভেতর খেলা সম্ভব নয়। এর মধ্যে কিছু খেলা শুরু হয় এক দেশে, শেষ হয় আরেক দেশে।

দর্শকদের উন্মাদনা যে শুধুমাত্র স্টেডিয়ামের ভিতরেই হয়ে থাকে তা কিন্তু সত্যি নয়, স্টেডিয়ামের বাইরেও বিভিন্ন আউটডোর খেলায়ও দর্শকদের আগ্রহ ও উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো !  

চলো আজ জেনে নেই এরকম কিছু খেলা সম্পর্কে যা নিয়ে দর্শকদের উন্মাদনার কোন কমতি নেইঃ 

Tour de France:

প্রতি বছর জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত এই সাইক্লিং প্রতিযোগীতা বিশ্বের অন্যান্য সাইক্লিং প্রতিযোগিতার চেয়ে আলাদা। প্রায় ২৩ দিনব্যাপী এই প্রতিযোগীতা কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। একরকম রাস্তার মাঝেই এই রেসিং সীমাবদ্ধ না। টাইম ট্রায়াল থেকে শুরু করে সমতল ভূমি, উঁচু নিচু পাহাড়ী রাস্তা কিংবা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উঁচু উঁচু স্থান কিছুই বাদ যায় না এই প্রতিযোগীতায়। প্রায় ২০০ জন প্রতিযোগী চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

সাধারণত ফ্রান্স অথবা এর আশেপাশের যেকোনো দেশে সাইক্লিং রেস শুরু হয় এবং ফ্রান্সে এসে শেষ হয়। ২০১৫  সালের ট্যুর ডে ফ্রান্স ৪ জুলাইয়ে শুরু হয়ে গেছে। এবার নেদারল্যান্ডের Utrecht এ সাইক্লিং রেস শুরু হয়েছে ও ২৬ জুলাই,২০১৫ তে ফ্রান্সের প্যারিসে এই রেস শেষ হবে।  

দর্শকরা রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগীদের অভিবাদন জানায়। এছাড়া, আড্ডার সাথে চলে খেলা দেখা। উপর থেকে দর্শকদের দেখলে মনে হয় বিশাল কোনো মানববন্ধন। খেলার শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় স্বাগতিক ভেন্যু।

Marathon:

প্রায় ২৬ মাইল দীর্ঘ এই দৌড় প্রতিযোগীতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায়ই অনুষ্ঠিত হয়। আধুনিক অলিম্পিকের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ইভেন্ট এটি। এত দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিতে যেমন শারীরিক সামর্থ্য দরকার, তেমনি প্রয়োজন দৌড়ে টিকে থাকার কৌশল জানা।

ট্যুর ডে ফ্রান্স সাইক্লিং রেস এর মতই  দর্শক রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেয় ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের। কিছু কিছু দর্শক প্রতিযোগীদের সাথে হাত মিলিয়ে প্রতিযোগীদের অভ্যর্থনা জানায়।

এছাড়া, কিছু কিছু দর্শক ব্যানার হাতে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগীদের সাহস যোগায়। ব্যানারের মধ্যে উৎসাহব্যাঞ্জক কথা লেখা থাকে। সত্যি বলতে, দর্শকদের কাছ থেকে এই বিপুল উৎসাহ প্রতিযোগীদের এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে অনুপ্রেরণা যোগায়। 

Boat Procession in Sydney Harbor: 

প্রতি বছর ২৬ ডিসেম্বর (বক্সিং ডে) তে সিডনি ইয়ট ক্লাব সিডনি থেকে হোবার্ট পর্যন্ত প্রায় ১১৭০ কিলোমিটার পথে নৌকাবাইচ প্রতিযোগীতার আয়োজন করে। বেশিরভাগ সময় তাসমান সাগরে এই প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হলেও মাঝে মাঝে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাংশেও এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দূর দুরান্ত থেকে হাজারো দর্শক এই প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে সিডনিতে জমায়েত হয় প্রতি বছর। প্রতিযোগিতা শুরু হবার আগে প্রতিযোগীরা নিজ নিজ নৌকা নিয়ে হালকা প্যারেড করে থাকে।

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন