দুই হাজারেরও বেশি বছর সময় আগে আগ্নেয়গিরির ধ্বংসযজ্ঞের নিচে চাপা পড়ে থাকা একটি প্যাপিরাস স্ক্রলের (পেঁচানো কাগজ) লেখা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। হারকালুনেয়াম, সবার কাছে যেটা পম্পেই নগরী নামে পরিচিত, খ্রিস্টপূর্ব ৭৯ অব্দে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির লাভা উদগিরনের ফলে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় এ নগরী।
১৭৫০ সালে এ পম্পেই নগরীর ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় বেশ কিছু প্যাপিরাস স্ক্রল (মুড়িয়ে রাখা প্রাচীন কাগজের এক ধরণের দলিল)। কিন্তু স্ক্রলগুলো এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো সেগুলো খুলতে গেলে তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। একারণে এ স্ক্রলগুলোতে কি লেখা ছিল সেটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এতোদিন।
ইটালির নেপলসের ইন্সটিটিউট অফ মাইক্রোইলেকট্রনিক্স ও মাইক্রোসিস্টেমের একজন থিওরেটিকাল গবেষক ভিটো মছেলা জানান, ‘প্যাপিরাস স্ক্রলগুলো আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত লাভার বিভিন্ন উপাদান দ্বারা ঢাকা ছিল’।
এর আগে বেশ কয়েকবার এ স্ক্রলের লেখা উদ্ধার করার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। যে কালি দিয়ে স্ক্রলে লেখা হয়েছিলো সে কালি তৈরি করা হয়েছিলো কাঠ-কয়লা আর আঠার সংমিশ্রণ দ্বারা। পুড়ে যাওয়া প্যাপিরাস থেকে এ ধরণের কালি দিয়ে কোন লেখা উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
মছেলা এবং তার সহকর্মীরা এরপর X-ray phase contrast tomography নামের একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করেন স্ক্রলের লেখা উদ্ধার করার জন্য। এর আগে ফসিলের কোন ক্ষতি না করেই সেগুলো পরীক্ষা করার জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিলো।
অবশেষে ফ্রান্সের গ্রেনবলে European Synchrotron Radiation Facility-এর গবেষণাগারে এই এক্স-রে ব্যবহার করে স্ক্রলের কয়েকটি অক্ষর উদ্ধার করতে সক্ষম হন গবেষকেরা। তারা ধারণা করছেন এইভাবে পুরো স্ক্রলটির লেখা উদ্ধার করতে পারবেন তারা।
স্ক্রলের হাতের লেখা দেখে তারা ধারণা করছেন এটা ফিলোদেমাস’এর লেখা একটি স্ক্রল হতে পারে। তিনি একজন কবি ও দার্শনিক ছিলেন যিনি ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের প্রায় ১০০ বছর আগে মারা যান।
ধীরে ধীরে কাঠ-কয়লায় ঢেকে থাকা এসব স্ক্রলের লেখা স্ক্যান করে তা উদ্ধার করতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদী গবেষকেরা। মছেলা বলেন, নেপলসে রাখা এরকম প্রায় ৭০০ স্ক্রলের লেখা উদ্ধার করা যেতে পারে এ পদ্ধতিতে। এর ফলে ২ সহস্রাধিক বছর আগেকার প্রাচীন দর্শনতত্ত্ব সম্পর্কে নতুন করে অনেক কিছুই জানা সম্ভব হবে।
জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ কলনের গ্রীক এবং ল্যাটিন ভাষার অধ্যাপক হুয়ারগেন হ্যামারস্টায়েড ছিলেন এই গবেষকদের দলে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ল্যাটিন লেখক যেমন ভারজিল, হোরাস, সিসিলীর মত ব্যক্তিরা যারা এপিকিউরাসের দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন তাদের লেখা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যাবে এ স্ক্রলগুলো থেকে’।