দেখতে ফুটবল কিন্তু অন্যরকম একটি খেলা

পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে ফুটবল অন্যতম। এই ফুটবলেরই আরেকটি সংস্করণ হল রাগবি। রাগবি খেলার মূল মন্ত্রই হচ্ছে প্রতিপক্ষকে ঠেলে, ধাক্কা দিয়ে বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তবে নামে ফুটবল হলেও রাগবি কিন্তু ফুটবল খেলার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। ফুটবল খেলায় বল হাতে লাগলেই তা ফাউল বলে ধরা হয়, কিন্তু রাগবিতে বল হাতে নিয়েই খেলোয়াড়দের দৌড়ে বেড়াতে হয়।

রাগবি খেলার জন্ম ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের রাগবি শহরে। প্রাচীন গ্রীক এবং রোমানরা গোলাকার বস্তু নিয়ে অনেক ধরণের খেলাই খেলত। গ্রীকরা Episkyros নামক এক ধরণের খেলা খেলত যা পরে রোমানরা তাঁদের মত করে বানিয়ে খেলতে থাকে। রোমানদের খেলাটির নাম ছিল Harpastum, এই খেলাই আধুনিককালে রাগবি হিসেবে রুপ পেয়েছে।

Also Read: এবারের বিষয় 'রাগবি' খেলা 

রাগবি খেলা দুই ধরণের, রাগবি লীগ, এবং রাগবি ইউনিয়ন। ফুটবলের মত রাগবি খেলার বলটি গোলাকার নয়, বরং ডিম্বাকার। খেলা শুরু হওয়ার পর দুই দলের খেলোয়াড়রা বল নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করে দেন। এ সময়ে তাঁদের মাঝে যে কুস্তিটা হয়ে থাকে, তাঁর সাথে WWE বা বক্সিং-এর কোন তুলনাই নেই। কিন্তু কুস্তি মানে এই নয় যে তাঁরা একে অপরকে ঘুসি, লাথি মারেন, বরং শুধুমাত্র কাঁধ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ধাক্কা দিয়ে ধরাশায়ী করতে হয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, রাগবি খেলোয়াড়রা বেশ শক্ত-সমর্থ, এবং হৃষ্টপুষ্ট হয়ে থাকেন। একজন খেলোয়াড় বল পাবার পর তা হাতে নিয়ে দৌড়ে ফিনিশিং লাইন পর্যন্ত যেতে থাকেন, পথিমধ্যে তাঁকে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা টেনে, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবার চেষ্টা করেন, এসব কিছু ডিঙ্গিয়েই একজন খেলোয়াড়কে বলসহ ফিনিশিং লাইনে পৌঁছতে হয় এবং তার পরেই ঐ দল পয়েন্ট পায়।

রাগবি লীগ এবং রাগবি ইউনিয়ন, দুটোই রাগবি খেলা হলেও এদের মাঝে কিছু পার্থক্য আছে। রাগবি লীগে খেলোয়াড়ের সংখ্যা ১৩, যেখানে ইউনিয়নের খেলোয়াড় সংখ্যা ১৫। রাগবি লীগে কোন খেলোয়াড় প্রতিপক্ষ দ্বারা ধরাশায়ী হলে খেলা সেখানে থেমে যায় এবং আবার কিক-অফ করা হয়। কিন্তু রাগবি ইউনিয়নে কোন খেলোয়াড় ধরাশায়ী হলেও খেলা বন্ধ হয় না বরং ঐ খেলোয়াড়ের কাছে বল থাকলে তা ছেড়ে দিতে বা পাস করে দিতে হয়।

Also Read: রাগবি না খেলুন মাঠের গঠনটাতো জানুন

রাগবি খেলায় একটি বিশেষ নিয়ম আছে যাকে বলা হয় স্ক্রাম (Scrum)। কোন খেলোয়াড় ধরাশায়ী হলে, বা বল মাঠের বাইরে চলে গেলে স্ক্রাম করা হয়। রাগবি লীগ এবং রাগবি ইউনিয়ন উভয় খেলাতেই স্ক্রাম রয়েছে, শুধু পার্থক্য হল কখন করা হয় তার ওপর। স্ক্রাম হল মূলত খেলা পুনরায় শুরু করার একটি পদ্ধতি। এ সময় উভয় পক্ষের খেলোয়াড়রা সারিবদ্ধ হয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকেন, এবং রেফারির বাঁশির শব্দের পর একে অপরের সাথে এমনভাবে লড়াই করেন যেন প্রত্যেকের মাথা অপরজনের কাঁধে আটকে থাকে।

স্ক্রাম শুরু হয় উভয় পক্ষের আটজন ফরওয়ার্ড খেলোয়াড়দের নিয়ে, তাঁরা তিন সারিতে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। রেফারি বাঁশিতে ফুঁ দেয়ার পর তিনি যখন বলেন “Crouch”, তখন খেলোয়াড়রা সামনের দিকে ঝুঁকে প্রস্তুত হন। তারপর রেফারি যখন বলেন “Touch”, তখন খেলোয়াড়রা প্রতিপক্ষের কাঁধ স্পর্শ করে প্রস্তুত হন। এরপর রেফারি “Set” বললেই উভয় পক্ষ একে অপরের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে ধরাশায়ী করার চেষ্টা করেন। এ সময়ে বলটি উভয় দলের মাঝখানে থাকে এবং বল পাবার জন্য খেলোয়াড়রা লড়াই করতে থাকেন। কোন এক খেলোয়াড় বল নিয়ে দৌড় দেয়ার পরেই স্ক্রাম ভেঙ্গে সব খেলোয়াড় তার পেছনে দৌড়ান।

রাগবি খেলায় আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে খেলোয়াড়রা বল দখলের জন্য ধস্তাধস্তি করছে তবে এই খেলা অনেক দমের এবং প্রানশক্তিতে ভরপুরও ! এই খেলার খেলোয়াড়রা বেশ শক্তিশালী হয়ে থাকেন, এবং তাদের মানসিকতাও মার-মার, কাট-কাট রকমের হয়ে থাকে।

 

  

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন