অনেকগুলো পরমাণু একটি প্রধাণ শিকলের পাশাপাশি ছোটো ছোটো অনেকগুলো শাখা শিকলের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে যখন বিশাল কোনো অণু গঠন করে, তাকে পলিমার বলে। যে কোনো এলকাইল(Alkyl) বা এরাইল ( Aryl ) মূলক দিয়ে গঠিত হতে পারে এ শাখা শিকল। প্রধান শিকলে যখন কার্বন থাকে, তখন একে বলা হয় জৈব পলিমার, আর প্রধান শিকলে কার্বন না থাকলে এটিকে অজৈব পলিমার বলা হয়।
প্রকৃতিতে অসংখ্য ধরনের পলিমার পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু কিছু পলিমারের বাস্তব জীবনে অনেক প্রয়োগ রয়েছে। সিল্ক, কটন, স্টার্চ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকজাত পদার্থ যেমনঃ পলিইথিলিন, স্টাইরোফোম; তন্তু বা সূতা জাতীয় রেয়ন, পলিস্টার কিংবা নাইলন- এ সবই পলিমারের অন্তর্ভুক্ত।
আমাদের শরীরের চামড়াতে কলাজেন নামক পলিমার রয়েছে। আবার কম্পিউটারের কীবোর্ডে রয়েছে অসংখ্য প্লাস্টিক পলিমার। বর্তমান ল্যাপটপগুলো লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার করে, যেগুলো দেখতে চিকন যাতে আবার চওড়া লিথিয়াম পলিমার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। বাইসাইকেল বা মোটর সাইকেলের চাকায় থাকে রাবার পলিমার। এমনকি আমরা যে খাবার খাই (বিশেষ করে ভাত এবং রুটি), সেখানেও প্রচুর পলিমার রয়েছে। আসলে বাস্তব জীবনে পলিমারের প্রয়োগ এত বেশি যে পলিমার ছাড়া পদার্থের সংখ্যা খুবই নগন্য।
পলিমার কৃত্রিম বা প্রাকৃতিক উভয় ধরণের হয়।
প্রায় ২০০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় এবং ১২০০ মিমি. পারদ চাপে সামান্য অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ইথিলিনের পলিমার পলিথিন তৈরী করা হয়। এ পলিথিনে পলিমারের ঘনত্ব ও গলনাঙ্ক খুবই কম হয়। তবে তাপমাত্রা এবং চাপ কমিয়ে দিয়ে উচ্চস্থায়ীত্ব বিশিষ্ট প্লাস্টিক পলিমার পদার্থ তৈরী করা সম্ভব।
অনেকগুলো বিক্রিয়কের অনুগুলোর একত্রে যুক্ত হয়ে পলিমার গঠন করার প্রক্রিয়াকে ঘনীভবণ পলিমারকরণ বলা হয়। আর এই ঘনিভবণ পলিমারের নাম “নাইলন”।
আবার, যে পলিমারকে সহজেই সম্প্রসারিত করা যায়, বাঁকানো যায়, তাপ প্রয়োগে গলানো যায়, তাকে থার্মোপ্লাস্টিক বলে। যেমনঃ PVC পাইপ।
কিছু কিছু পলিমারকে তাপ দিলে তরল/বাষ্প না হয়ে সরাসরি কয়লা হয়ে যায়। এদের থার্মোসেটিং পলিমার বলা হয়।
এতো এতো ব্যবহার স্বত্বেও পলিমার যৌগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বাধাও রয়েছে। পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর কিছু উপাদান এ পলিমারে রয়েছে, যা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে দিন দিন বেড়ে চলছে, উৎপন্ন হচ্ছে জৈব এসিড, যা পরিবেশ তথা মানব শরীরের জন্যে যথেষ্ট ক্ষতিকর।