সুদানের রাজধানী খারতুম থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে, প্রচণ্ড শুষ্ক আবহাওয়া আর অবসবাসযোগ্য পরিবেশের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন এক নগরীর ধ্বংসাবশেষ। এ যেন কোন সিনেমার দৃশ্য থেকে তুলে আনা।
বালির স্তুপের নীচে হারিয়ে যাওয়া এ শহরে রয়েছে পিরামিড। কালের বিবর্তনে অনেকেই হয়তো ভুলে গিয়েছিলো এগুলোর কথা। আশেপাশে কোন হোটেল বা রেস্টুরেন্ট না থাকার কারণে পর্যটকরাও তেমন একটা আসে না এই দিকটাতে।
এখানকার পিরামিডগুলোকে বলা হয় ‘নুবিয়ান মেরো’ পিরামিড। নীল নদের পূর্ব তীরে বাগরাউইয়াহ নামক এক গ্রামের পাশে অবস্থিত এই পিরামিডগুলো। তবে মিশরের রাজকীয় পিরামিডের তুলনায় এগুলো খুবই ছোট।
পিরামিডগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ‘মেরো’ নামক প্রাচীন এক শহরের নামানুসারে। বর্তমান সুদানে বহুবছর আগে এক আফ্রিকান রাজত্ব ছিল যার নাম ছিল ‘কুশ’। এই কুশ সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল মেরো।
প্রায় ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, ২৪তম মিশরীয় শাসনের পতনের পর নীল নদের মধ্যভাগে নুবিয়ান কুশ সাম্রাজ্য গড়ে উঠে। কুশ রাজারা ৭১২ থেকে ৬৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মিশরের বেশিরভাগ অঞ্চল শাসন করে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ পর্যন্ত এই মেরো অঞ্চল কুশের রাজধানী ছিল এবং এখানের পিরামিড তৈরি করে সেখানে রাজা-সভ্রান্তদের কবর দেয়া হত।
মিশরীয়রা পিরামিড তৈরি করা বন্ধ করে দেয়ার প্রায় ৮০০ বছর পরও এই অঞ্চলে রাজকীয় পিরামিড তৈরি করা হতো। মেরোর মরুভূমিতে এখনো ৫০টিরও বেশি পিরামিড এবং রাজকীয় কবরস্থান রয়েছে। কুশ সাম্রাজ্যের ৪০ জনেরও বেশি রাজা-রাণীর কবর রয়েছে এসব পিরামিডে।
১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই পিরামিডগুলোতে খননকার্য শুরু হয়। ইটালিয়ান আবিষ্কারক জুসেপে ফারলিনি প্রায় ৪০টি পিরামিডের উপরের অংশ ভেঙে সেগুলোর ভিতরে প্রবেশ করেন। এখান থেকে প্রাপ্ত সম্পদগুলো ব্রিটিশ মিউজিয়াম এবং জার্মান মিউজিয়ামে দিয়ে দেন।