এবারের মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে অনুর্ধ্ব আঠারো বিভাগে টেলিভিশন ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি অ্যাওয়ার্ডে প্রথম পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ফারহা জাবীন ঐশী। এর আগে এ বছরই অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব প্রতিযোগিতায় অনুর্ধ্ব আঠারো বছর বয়সী প্রতিযোগিদের শর্টফিল্ম বিভাগে দ্বিতীয় সেরা হয় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর এই শিক্ষার্থী।
দুই মিনিটের একটি অ্যানিমেশন শর্টফিল্ম বানিয়ে সে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিযোগি ও দশনার্থীদের। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয় তার পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘লং ওয়ে টু গো’। তার এই অর্জন নিয়ে এ বছর চ্যাম্পস টোয়েন্টিওয়ান ডটকমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
নিজের সৃজনশীল কর্মের এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এ বছর মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের জন্য অংশ গ্রহণ করে ঐশী। উল্লেখ্য মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে অংশ নিতে চাইলে নিজের সৃজনশীল কর্মের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হতে হয় দেশের স্বীকৃত প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়। অন্যান্য বছর তার এরকম কোনো প্রকাশিত প্রতিবেদন না থাকায় অংশ নিতে পারেনি।
এবার আর সে কষ্ট ছিলো না তার। নিজের আবেদনের সঙ্গে চ্যাম্পস টোয়েন্টিওয়ান ডটকমের প্রতিবেদকের নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে নমিনি হিসেবে যুক্ত করে দিয়েছিলেন তিনি। হতাশ হতে হয়নি তাকে। এই বিভাগের অনেক প্রতিযোগিকে পেছনে ফেলে জিতে নিয়েছেন মীনা মিডিয়ার প্রথম পুরস্কার।
পুরস্কার জিততে পেরে অনেক খুশি সে। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছে চ্যাম্পস টোয়েন্টি ওয়ানকেও। ঐশী বলেন, চ্যাম্পস টোয়েন্টি ওয়ানে প্রতিবেদন প্রকাশ না হলে এবারও প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়তে হতো। পুরস্কার হিসেবে সে পেয়েছে ৫০ হাজার টাকা, একটি ক্রেস্ট ও সনদ। প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কী করতে চান এমন প্রশ্নের জাবাবে ঐশী জানান, ভালো একটি কাজে ব্যয় করবে এই অর্থ। যাতে সমাজ ও দেশের উপকার হয়।
তার পরিচালিত শর্ট ফিল্ম ‘লং ওয়ে টু গো’র কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলো একজন কিশােরী। যে ছোটবেলা থেকে অনাদর আর অবহেলার সঙ্গে লড়াই করে সামনে এগুতে থাকে। একটু করে বড় হয় আর নতুন নতুন সমস্যার মুখে পড়তে হয় তাকে। বাবা-মার বিধি-নিষেধ, পারিবারিক বৈষম্য, স্কুলের পথে ইভটিজিং এর শিকার হওয়া এরকম শত প্রতিকুলতার মধ্যেও স্বপ্ন দেখা ছাড়েনা সে।
তার চোখে বড় হয়ে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন। একদিন সত্যি সত্যি সে তার স্বপ্নের জগতে পৌঁছে যায়। দেখতে পায় তার চারপাশের পরিবেশ তার সফলতার সঙ্গে সঙ্গে কেমন করে বদলে যেতে শুরু করে। বাগানে ফুল ফুটছে, আকাশে সাত রঙা রংধনু। সবই যেনো স্বাগত জানাচ্ছে তাকে।
মেয়ের এই সাফল্যে ঐশীর মা জামাল আরা এবং বাবা ইকবাল হোসেন খুবই আনন্দিত। তারা বলেন, শুরুতে পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে মেয়েকে বাধা দিতাম। এখন কোনো কাজে বাধা দেই না। মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড জেতার পরে ওর প্রতি আমাদের আস্থা আরো বেড়ে গেছে।
তিনবোনের মধ্যে সবার বড় এশী। শর্টফিল্ম তৈরি করা তার শখ। তিনি বলেন, শখের বসে ছবি বানাই। ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন গল্পের বই পড়ি। তার প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং হুমায়ূন আহমেদ। আর প্রিয় পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী এবং তারেক মাসুদ। বড় হয়ে একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ হওয়ার স্বপ্ন তার।