ইংরেজরা বরাবরই একটু বেশি গুরুগম্ভীর ধরনের হয়। কোন কিছু হালকাভাবে নেওয়াটা যেন তাদের সহজে আসে না। ফিলিয়াস ফগ আবার তারচেয়েও এক কাঠি সরেস। ক্লাবের একজন বললেন ৮০ দিনে পুরো দুনিয়া ঘুরে আসা সম্ভবই নয়, আর তিনি তৎক্ষণাৎ তার বিপক্ষে বাজি ধরে বসলেন।
ফলাফল ?
সেদিনই বেরিয়ে পড়লেন বিশ্বভ্রমণে। সঙ্গে সদ্য চাকরি পাওয়া তাঁর পরিচারক ফরাসি যুবক পাসপারতু। আর ব্যাগে অনেকগুলো টাকা – ঘুরতে গেলে নানারকম খরচ তো লাগবেই।
তিনি তো বেরিয়ে পড়লেন। এর পরপরই খবরও ছড়িয়ে গেল। আর দুনিয়াজোড়া সবাই শুরু করল মহা তর্কাতর্কি। কেউ শ্রদ্ধায় কথা হারায়। আবার কেউ বলে – পাগলামিরও তো একটা সীমা থাকা দরকার।
ফগের সেসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কখন কোথায় পৌঁছুতে হবে তার হিসাব কষে আশেপাশের মনোহর সব দৃশ্য উপেক্ষা করে তিনি কেবল নজর দিচ্ছেন তাঁর যাত্রা ঠিকভাবে সম্পন্ন করবার দিকে।
পাসপারতুর অবশ্য এদিকটা নিয়ে বেশ মন খারাপ। ফিক্স নামের এক সহযাত্রীর কাছে সে মনের ক্ষোভ জানায় – মনিবের এভাবে ‘ স্টিমার থেকে ট্রেনে, আবার ট্রেন থেকে স্টিমারে লাফিয়ে বেড়ানোটা ‘ তার মোটেই ভাল লাগে না।
এদিকে হয়েছে আরেক কাণ্ড। ফগের অদ্ভুত এই বাজির কারণ ছিল এক ব্যাগ ডাকাতি। ডাকাত টাকাপয়সা নিয়ে সহজেই অন্য দেশে গিয়ে গা ঢাকা দিতে পারবে কি না তা নিয়ে তর্ক করতে গিয়েই এই বাজি ধরা। এখন সেই ডাকাতটির চেহারার বর্ণনা শুনে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের এক গোয়েন্দা দাবি করে বসলেন যে, ফগই সেই ডাকাত, আর তিনি ডাকাতির টাকা নিয়ে দেশভ্রমণের ছুতোয় এভাবেই পালাচ্ছেন।
নিজের অনুমানের কথা জানিয়েই তিনি বসে রইলেন না, বরং ডাকাত ধরতে ফগের পিছুও নিলেন। পাসপারতু যার কাছে দুঃখের কথা বলে মনের ভার কমাচ্ছে এই ফিক্সই সেই গোয়েন্দা !
পরিস্থিতি এবার বেশ জমজমাট। ফগকে গ্রেফতারের অনুমতি চেয়ে পাঠিয়ে ফিক্স কেবলই ফগের পিছু পিছু দৌড়ে বেড়ান, কিন্তু সময়মত পরোয়ানা আর আসে না। ইতিমধ্যে ফগের সঙ্গী হন ভারতের কোন এক রাজ্য থেকে সতীদাহের হাত থেকে রক্ষা করা এক বিধবা – নাম তাঁর আউদা।
সময় গড়িয়ে চলে। আরও নানারকম বাধা বিপত্তি আসে তাঁদের সামনে। ফিক্স পাসপারতুর কাছে নিজের সন্দেহের কথা খুলে বলেন কিন্তু পাসপারতু তাঁকে ফগকে গ্রেফতার করতে দিতে নারাজ। বাধ্য হয়ে তাকে অজ্ঞান করে রেখে ফিক্স চলে যান। তার ফলে সঙ্গছাড়া হয়ে গেলেও ইয়োকোহামাতে কিন্তু পাসপারতুর সাথে ঠিকই তাঁর মনিবের দেখা হয়। ক্ষমাটমা চেয়ে ফিক্স তাঁদের সঙ্গী হন। সানফ্রানসিসকোতে ট্রেনে একদল হামলা করলে ফগের পাশাপাশি ফিক্সও তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
কিন্তু আয়ারল্যান্ডের কুইন্সটাউনে নেমেই বহুপ্রতীক্ষিত পরোয়ানাটি হাতে পেয়ে ফগকে গ্রেফতার করে বসেন কর্তব্যপরায়ণ ফিক্স।
এবার ?
এভাবে তীরে এসে তরী ডুববে তা কেউ কল্পনাও করেন নি।
ফগ এখন কীভাবে ছাড়া পাবেন এ বন্দি দশা থেকে? শেষ করতে পারবেন তিনি তাঁর সুদীর্ঘ ভ্রমণ ? জিততে পারবেন সেই অসম্ভব বাজি ?
জানতে হলে পড়তে হবে ফরাসি লেখক জুল ভার্নের (Jules Verne) অসাধারণ একটি রোমাঞ্চকর কাহিনী আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ ( Around the World in Eighty Days) ।