২০০৬ সালের এক মধ্যরাতে পশ্চিম বেলিজের এক কৃষক হঠাৎ করেই ঘরের বাইরে সাহায্য চেয়ে কারো চিৎকার শুনতে পান। দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে তিনি দেখতে পান একজন মানুষ একটি গুহায় পড়ে গিয়েছে।
উদ্ধারের পর জানা যায়, লোকটি একজন চোর। ওই জায়গায় সে মায়ান সভ্যতার নিদর্শন খুঁজে বেড়াচ্ছিল তা কালোবাজারে বিক্রি করার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে এমন একটি জায়গায় পড়ে যায় যা সে প্রত্যাশা করেনি।
মূল্যবান মণিমুক্তার বদলে সে দেখে গুহায় প্রচুর খুলি আর হাড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। হাজার বছর আগে এ গুহায় বলি দেয়া মানুষের মৃতদেহ এগুলো।
২০০৮ সালে মায়ান বিশেষজ্ঞ জেমস ব্রান্ডি এই গুহায় আসলে কী আছে তা অনুসন্ধান শুরু করেন। সেখানকার কৃষকরা জায়গাটিকে ‘মাঝরাতের ভয়ানক গুহা’ বলে আখ্যায়িত করেন। গবেষকেরা বুঝতে পারেন, গুহাটি একসময় মানুষকে উৎসর্গ করার কাজে ব্যবহার করা হতো। বিপুল পরিমাণ হাড়গোড়ের সাথে সেখানে এক সময়কার শস্য ভরা একটি নৌকার ভাঙাচোরা অংশও খুঁজে পান তারা।
আগামীতে যাতে প্রচুর ফসল ফলে তার জন্যই এ দুটি জিনিস উৎসর্গ করা হতো। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, গুহাটিতে কমপক্ষে ১০ হাজার হাড় পাওয়া গিয়েছে। ব্রান্ডি বলেন, ‘আমাদের কোন ধারণাই ছিল না যে এরকম বিপুল পরিমাণ মানুষের হাড়গোড়ের সন্ধান পাবো আমরা’।
হাড়গোড়ের পাশাপাশি প্রত্নতত্ত্ববিদেরা গুহাতে প্রায় ১০০ দাঁত খুঁজে পেয়েছে। কিছু দাঁত দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এখানে শিশুদেরও বলি দেয়া হতো।
আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা এগুলো ভালোমতো পরীক্ষা করেন। স্ট্রনটিয়াম আইসোটপিক সিগনেচার নামক একটি জটিল পরীক্ষার মাধ্যমে তারা জানতে পারেন, এই শিশুগুলো ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী ছিল। এরা প্রায় ২০০ মাইল দূর থেকে এসেছিল।
ব্রান্ডি বলেন, মায়ানরা শিশুদের বলি দেয়ার কাজটা করতো একটি নির্দিষ্ট কারণে। স্পেনের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে জানা যায়, বাবা-মা ছাড়া অথবা হারিয়ে যাওয়া কোন বাচ্চা পেলে তাদেরকে ধরে এনে বলি দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো।
নিজেদের সমাজ থেকেই এদের ধরা হতো। কিন্তু একই সমাজ থেকে যদি বেশি পরিমাণে মানুষ বলি দেয়া হয়, তাহলে সেখানে অসন্তোষের সৃষ্টি হতো। তাই তখন অন্যান্য জায়গা থেকে মানুষ ধরে আনা হতো বলি দেয়ার জন্য। যদিও এসব তথ্য সম্পর্কে কোন শক্ত প্রমাণ আমাদের হাতে নেই।