ঘরের চাবি কোথায় রেখেছেন ভুলে গিয়েছেন? কোন একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা মনে নেই? মোবাইল বা মানিব্যাগ নিয়ে ঘর থেকে বের হতে ভুলে গিয়েছেন? মাঝবয়সে বা একটু বেশি বয়স হলে ভুলে যাওয়ার এরকম প্রবণতা বেশিরভাগ মানুষের মাঝেই দেখা যায়। ডাক্তারি ভাষায় একে বলে আলঝেইমার’স ডিজিস। এটি হচ্ছে মানুষের স্মৃতিভ্রংশের একটি রোগ।
আলঝেইমার এমন একটি রোগ যার কোন প্রতিকার নেই। কিন্তু আরও কিছু কারণে মানুষের স্মৃতিভ্রংশ ঘটতে পারে যেগুলো প্রতিকারযোগ্য। যেহেতু স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়াটা মানুষের মাঝে যে কোনো বয়সে বা বিভিন্ন কারণে দেখা দিতে পারে। সুতরাং কারণ এবং প্রতিকার জানলে এ সমস্যা থেকেও বের হয়ে আসা সম্ভব।
বোস্টনে অবস্থিত ব্রিংহাম এন্ড উইমেন্স হসপিটালের একজন নিউরোলজিস্ট সেথ গেল জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবন করলে, প্রচুর হতাশার মধ্যে থাকলে এবং ঘুম কম হলে মানুষের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, স্মৃতিভ্রংশের মত সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। লক্ষণ দেখে এবং এমআরআই’এর মত বিভিন্ন পরীক্ষা করে ডাক্তার নিশ্চিত হতে পারেন যে তার মস্তিষ্কে আসলে কি ধরণের সমস্যা হচ্ছে। সে অনুযায়ী তিনি পরামর্শ দেবেন।
তবে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার পেছনে প্রাথমিকভাবে ৫টি কারন শনাক্ত করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
স্লিপ এপনিয়া
স্লিপ এপনিয়া হচ্ছে ঘুমের একধরণের অস্বাভাবিকতা। দুইটি নিঃশ্বাসের মধ্যবর্তী ব্যবধানকে এপনিয়া বলে। রাতে ঘুমের মধ্যে অনেকেরই এপনিয়ার অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। মানুষের স্মৃতিশক্তি দুর্বল বা স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার এটি একটি কারণ।
এপনিয়ার কারণে আপনার মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছাতে সমস্যা হয় যে কারণে স্মৃতি দুর্বল হয়ে পড়ে। আপনার ঘুমের মধ্যে স্লিপ এপনিয়া হয়েছে কিনা সেটা আপনি বুঝবেন যদি সকালে আপনার মাথা ব্যথা করে বা ক্লান্তি লাগে অথবা আপনার সঙ্গী যদি বলে যে ঘুমের মধ্যে জোরে জোরে নাক ডাকেন।
এরকম সমস্যার কারণে আপনার সাধারণত স্থান, কাল, পাত্র বিষয়ক স্মৃতিভ্রংশ ঘটতে পারে। যেমন: চাবি বা চশমা কোথায় রেখেছেন ভুলে যেতে পারেন। গভীর ঘুম এবং ঘুমের মধ্যে যদি rapid eye movement (REM) হয় তাহলে তা স্মৃতিশক্তির জন্য উপকারী।
সাইলেন্ট স্ট্রোক
স্ট্রোকের ফলে মানুষের মস্তিষ্ক মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হতে পারে। স্ট্রোকের কারণে আমাদের মস্তিস্কে রক্ত সরবরাহকারী নালীগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছাতে পারে না।
সাইলেন্ট স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের ছোট ছোট রক্তনালীগুলো বন্ধ বা সরু হয়ে যায়। একে বলা হয় ‘ভাসকুলার কগনিটিভ ইম্পায়ারমেন্ট’। আমাদের মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা এই কারণে ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। স্ট্রোকের কারণে তাই আমাদের স্মৃতিভ্রংশ হতে পারে।
কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এক তথ্য অনুযায়ী বেশ কয়েক ধরণের ওষুধ সেবন করলে মানুষের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে: ঘুমের ওষুধ, নির্দিষ্ট কিছু পেইনকিলার ওষুধ, ডায়াবেটিসের ওষুধ, কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ, দুশ্চিন্তা এবং হতাশা কমানোর ওষুধ, অ্যান্টিহিস্টামিন।
পুষ্টিহীনতা
আমাদের স্নায়ুর যথাযথ কাজ করার জন্য B12 ভিটামিন অত্যাবশ্যক। পর্যাপ্ত পরিমাণে B12 ভিটামিন শরীরে না পৌঁছালে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া এবং স্মৃতিভ্রংশের মত মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন আপনাকে অন্তত ২.৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন B12 খেতে হবে। প্রতিদিনকার মাছ, মাংস এবং শস্যজাতীয় খাবার থেকে এ পুষ্টি আসতে পারে।
চাপ, হতাশা এবং দুশ্চিন্তা
প্রচণ্ড পরিমাণ চাপ এবং হতাশা মানুষের মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল করে দেয়। যারা অনেক কাজ করে এবং সে তুলনায় কম ঘুমায় তাদের ক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনা বেশি দেখা যায়।
স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার আরও কিছু ছোট ছোট কারণ
– মস্তিষ্কে যদি বড় ধরণের কোন ইনফেকশন হয়
– মাথায় বড়সড় রকমের কোন আঘাত পেলে
– মস্তিষ্কে কোন টিউমার হলে
– অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান এবং মাদক গ্রহণ করলে