চলে এসেছে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮। ৩২টি দেশের মধ্যে মোট ৬৪টি ম্যাচ হবে বিশ্বকাপ। এজন্য প্রস্তুত ১২টি স্টেডিয়াম। যার মধ্যে ৩টি পুরনো স্টেডিয়ামের আমূল সংস্কার করা হয়েছে। আর বাকি ৯টি স্টেডিয়াম একেবারে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। চলুন আজ জেনে নিই ইয়েকাতেরিনবার্গ অ্যারেনা স্টেডিয়াম সম্পর্কে।
রাজধানী মস্কো থেকে ১০৯০ কিলোমিটার দূরের ইয়েকাতেরিনবার্গ মধ্য রাশিয়ার একটি শহর। উরাল পর্বতের পাদদেশে এই শহরটি রাশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর। ভৌগলিকভাবে ইয়েকাতেরিনবার্গ ইউরোপ এবং এশিয়ার সীমান্তরেখায়। ইসেত নদীর তীরে অবস্থিত শহরটি স্ভের্দ্লভ্স্ক্ ওবলাস্ত-এর প্রশাসনিক কেন্দ্র। শহরটি উরাল পর্বতমালার পূর্ব ঢালে একটি খনিজ-সমৃদ্ধ অঞ্চলে অবস্থিত। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প শহর। শহরটি আন্তঃসাইবেরীয় রেলপথের উপর অবস্থিত। এখানে প্লাটিনাম শোধনাগার, তামা ও লোহার আকরিক গলানোর কারখানা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, রাসায়নিক দ্রব্য এবং ভারী যন্ত্রপাতি বানানোর কারখানা রয়েছে।
ইয়েকাতেরিনবার্গে উরাল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইয়েকাতেরিনবুর্গ সরকারি মেডিকাল ইনস্টিটিউটসহ মোট ১৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাকাডেমি রয়েছে। এটি উরাল অঞ্চলের একটি শিক্ষাকেন্দ্র।
রুশ সম্রাট মহান পিটার ১৭২১ সালে একটি লৌহ কারখানা শহর হিসেবে শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর স্ত্রী ইয়েকাতেরিনার নামে এটি নামকরণ করা হয়। ১৮শ শতকের শেষ দিকে বৃহৎ সাইবেরীয় মহাসড়ক নির্মাণের সময় শহরটির শিল্পোন্নতি শুরু হয়। রুশ বিপ্লবের পর রুশ রাজা দ্বিতীয় নিকোলাস ও তার পরিবারকে বলশেভিকেরা এখানে অন্তরীণ করে রাখে ও পরবর্তীকালে ১৯১৮ সালে তাদেরকে হত্যা করে। ১৯২৪ সালে বলশেভিক ও সোভিয়েত নেতা ইয়াকভ সভের্দফের সম্মানে শহরটির নাম বদলে সভের্দলভ্স্ক রাখা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার ইউরোপীয় অংশে হুমকির সম্মুখীন শিল্পগুলো এই শহরে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর শহরের নাম বদলে আবার ইয়েকাতেরিনবার্গ রাখা হয়।
প্রায় ১৩ লাখ অধিবাসীর ইয়েকাতেরিনবার্গ শহরে অবস্থিত ইয়েকাতেরিনবার্গ অ্যারেনা রাশিয়া বিশ্বকাপের সম্ভবত বিচিত্র স্টেডিয়াম। একটি গোল পোস্টের পিছনের স্ট্যান্ডটি এতটাই উঁচু যে তা দেখে মনে হবে যেন স্টেডিয়ামের ছাদ পেরিয়ে যাচ্ছে। সুবিশাল ছাদ এই স্টেডিয়ামের।
ইয়েকাতেরিনবার্গের সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম নামে পরিচিত এই স্টেডিয়ামটি এর আগে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হলেও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নতুনভাবে সেজে উঠেছে। বিশ্বকাপের পরে স্টেডিয়ামটি এফসি উরাল ইয়েকাতেরিনবার্গের হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এটি বিশ্বকাপের একমাত্র স্টেডিয়াম যেখানে মূল মাঠের বাইরে অস্থায়ী দর্শক গ্যালারি তৈরি করা হয়েছে। ফিফার শর্ত রয়েছে – বিশ্বকাপের যেকোনও স্টেডিয়ামে অন্তত ৩৫ হাজার আসন থাকতে হবে। বিপদে পড়ে যান কর্তৃপক্ষ। পরে স্থপতিদের পরামর্শে দুই গোল-পোস্টের পেছনে মূল মাঠের কিনারে বাড়তি দুটি গ্যালারি নির্মাণ করা হয়। মূল স্টেডিয়ামটি তৈরি হয় ১৯৫৩ এবং ১৯৫৭ সালের মধ্যে। পরে ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়। এটি রুশ প্রিমিয়ার লীগ ক্লাব উরাল ইয়েকাতেরিনবার্গের হোম-গ্রাউন্ড।
বিশ্বকাপের জন্য এই স্টেডিয়ামের দর্শক আসন সংখ্যা বর্তমানে ৩৫ হাজার ৬৯৬। তবে বিশ্বকাপের পরে তা কমিয়ে ২৫ হাজারে নামিয়ে আনা হবে বলে জানা গেছে।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ইয়েকাতেরিনবার্গে ৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ১৫ জুন মিশর বনাম উরুগুয়ে, ২১ জুন ফ্রান্স বনাম পেরু, ২৪ জুন জাপান বনাম সেনেগাল ও ২৭ জুন মেক্সিকো বনাম সুইডেনের মধ্যে হবে বিশ্বকাপ লড়াই।