রঙ বেরঙের মনুষ্যবাহী বেলুন

আকাশে চরে বেড়ানোর শখ মানুষের অনেক দিনের। ঠিক মুক্ত বিহঙ্গের মতো না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদেরও হার মানিয়েছে মানুষ। ম্যাগাজিন বা টেলিভিশনে দেখা যায় বড় এক বেলুনের নিচে একটা ঝোলানো ঝুড়িতে কয়েকটি মানুষ, তারা আবার বার্নার ব্যবহার করে ওপরে বেলুনের ভেতরের বাতাসকে গরম করছে। এই ধরণের বেলুনকে বলা হয় উষ্ণ বায়ু বা হট এয়ার বেলুন। উষ্ণ বায়ুর বেলুন করে মূলত মানুষ আকাশে ভেসে বেড়ানোর আনন্দ উপভোগ করে থাকে।

তাহলে কি এটি সত্যিকারের বেলুন নাকি অন্য কিছু? না, উষ্ণ বায়ুর বেলুন সাধারণ বেলুনের মতোই। আমরা জানি, বেলুন এমন একটি আকাশযান যার নিজস্ব কোন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নেই এটি কেবল মাত্র বাতাসের সাথে ভেসে বেড়ায়। বেলুনের বাতাসের বিপরীতে যাওয়ার ক্ষমতা নেই তাই বেলুনের এই ধর্ম কাজে লাগিয়ে উষ্ণ বায়ুর বেলুনকে উপরে উড়ানো হয়ে থাকে। বেলুনের ভেতরের গরম বাতাসের ঘনত্ব বাইরের বাতাসের ঘনত্বের চাইতে কম হওয়ায় আর্কিমিডিসের নীতি অনুযায়ী উষ্ণ বায়ুর বেলুন ওপরে ওঠে। ১৭৮৩ সনে ফ্রান্সের মন্টগলফিয়ার ভ্রাতৃদ্বয় মানুষ পরিবাহী উষ্ণ বায়ুর বেলুনের প্রবর্তন করেন। এছাড়া, তাপের সাথে বাষ্পের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে এই ধরণের বেলুন উড়ানো হয়ে থাকে। আমরা জানি যে, তাপমাত্রা বাড়লে বাষ্পচাপ বৃদ্ধি পায়। আর এই নীতিকে কাজে লাগিয়েই আগুনের ফলে সৃষ্ট বায়ুর ঊর্ধ্বচাপ দ্বারা বেলুন উড়ে যেতে থাকে। বেলুনে বাতাস উত্তপ্ত করার জন্য আগুন জ্বালানো হয় বার্নারের সাহায্যে। মূলত বাতাস গরম হলে তা উপরে উঠে I যেহেতু বেলুনের ভিতরে গরম বাতাস প্রবাহিত হয় তাই সহজেই বেলুন উপরে উঠে।

উষ্ণ বায়ুর বেলুনে গরম বাতাস ধারণ করতে পারার মতো একটি ব্যাগ থাকে যাকে Envelope বলা হয়। এটি মূলত অগ্নি রোধক মজবুত নাইলন দিয়ে তৈরি। বেলুনের যেখানে মানুষ অবস্থান করে তাকে Gondola বলা হয়।

ফানুসকেও উষ্ণ বায়ুর বেলুন বলা হয়ে থাকে। ফানুস হলো পাতলা কাগজের তৈরি বেলুনসদৃশ বস্তু, যার নিচের অংশ খোলা থাকে। সেই খোলা মুখে দীর্ঘক্ষণ জ্বলে এমন করে শিখা জ্বালানো হয়। সে শিখার গ্যাসে ফোলানো হয় কাগজের ফানুসটি। গ্যাসে পরিপূর্ণ হলেই ফানুস আকাশে উড়তে পারে।

আমাদের দেশে ফানুস উৎসব হলেও উষ্ণ বায়ুর বেলুনের উৎসব তেমন দেখা যায় না। উষ্ণ বায়ুর বেলুন নিয়ে আকাশে ডানা মেলার নানা আয়োজন হয় অনেক দেশেই। তবে আয়ারল্যান্ডের ওয়াটারফোর্ড শহরে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় সবচেয়ে বড় উড়ন্ত বেলুন উৎসব। এ উৎসব প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে লংফোর্ডের নিউক্যাসল হাউসে।

আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে যে, বেলুনে করে আফ্রিকা পাড়ি দেওয়ার অভিযান নিয়ে ফ্রেঞ্চ লেখক জুলভার্ন লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত বই ‘ ফাইভ উইকস ইন এ বেলুন ‘। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৬৩ সালে। তিনজন অভিযাত্রীকে নিয়ে বই। অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. ফার্গুসন। আফ্রিকার গহিনতম অরণ্যে তিনি মহানন্দে বেলুনে চেপে বিহার করেন তাঁর দুই সহযাত্রীকে নিয়ে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন