বৈচিত্র্যময় কিছু জনগোষ্ঠীর কথাঃ জিপসি

আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো জিপসিদের সম্পর্কে।

জিপসি জনগোষ্ঠীকে পূর্বে রোমা বা রোমানি বলে ডাকা হতো। এখন অনেকটা খর্ব করেই এদেরকে ডাকা হয় জিপসি বা ভবঘুরে নামে। সাড়া বিশ্বে ১ কোটির বেশি জিপসি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আর শুধু আমেরিকাতেই আছে ১০ লাখের বেশি।

জিপসিরা ঠিক কোথা থেকে এসেছে সেটা নিয়ে বেশ মতভেদ রয়েছে। আগে বলা হতো জিপসিরা প্রাচীন মিশর থেকে এসেছে। তবে ২০১২ সালের এক গবেষণা বলছে জিপসিদের আদি নিবাস ছিল দক্ষিণ এশিয়াতে। সে সূত্র ধরেই এখন মনে করা হয় প্রায় ১৫০০ বছর আগে রোমানিরা ভারত থেকে ইউরোপে অভিবাসন করে।

আগে জিপসিদের মধ্যে শুধুমাত্র রোমানিরা থাকলেও এখন ভবঘুরে ধরণের যেকোনো গোত্রই জিপসিদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। ইংল্যান্ডের রোমানিচালস, ক্রোয়েশিয়ার বেয়াশ গোত্র, তুরস্কের রোমানলার আর মিশরের ডোমারি গোত্রও এখন জিপসিদের অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে কিছু সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকলেও জীবনধারণ পদ্ধতি মোটামুটি একই।

A Gipsy Family
ছবি : সংগৃহীত

কালো চামড়া হবার কারণে ইউরোপে রোমানিদের সবসময় হেয় করা হয়। ধারণা করা হয় তারা খুবই চতুর, চোর এবং রহস্যময় প্রকৃতির। জিপসিরা ভবিষ্যৎ বলতে পারে আর নতুন কোন জায়গায় চলে যাবার আগে তারা অনেক কিছু চুরি করে নিয়ে যায় বলেও মনে করা হয়।

জিপসিরা সবসময় ভ্রমণের উপরে থাকে। এরা কখনো এক জায়গায় থিতু হয় না। এদের কিছু ক্যারাভ্যান, ওয়াগন এবং আরভি (রিক্রিয়েশনাল ভিহিকল) রয়েছে যেগুলোতে তারা বসবাস করে এবং এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়। এগুলোই জিপসিদের ঘরবাড়ি এবং যানবাহন। এগুলোকেই তারা ভেতরে পরিবর্তন করে বসবাসের উপযোগী করে নিয়েছে। তাদের এরকম স্থানান্তরিত হবার কারণে এরা স্কুলে যেতে পারে না এবং একারণে এদের শিক্ষার হারও কম।

জিপসিরা নির্দিষ্ট কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না। এদের আসলে কোন ধর্ম নেই বা যে জায়গায় এরা অবস্থান করে সেখানকার ধর্মকে শ্রদ্ধা করে চলে।

Gypsies 2
ছবি : সংগৃহীত

সাংস্কৃতিক দিক থেকে রোমানিরা অনেক উন্নত বিশেষত তাদের সংগীত চর্চা। জ্যাজ, বোলেরো, ফ্ল্যামেঙ্কো মিউজিকে তারা বেশ দক্ষ। রোমানি মেয়েরা নাচেও খুব ভালো।

জিপসিদের মধ্যে কিছু বিভেদ থাকলেও এরা সবাই একই ভাষায় কথা বলে। এটি হচ্ছে রোমানি ভাষা (Rromanës)। উত্তর ভারতীয় ভাষাগোষ্ঠী থেকে (ধারণা করা হয় পাঞ্জাব ভাষা থেকে) এই ভাষার উদ্ভব ঘটেছে। বর্তমানে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ জিপসি এই ভাষা ব্যবহার করে।

Gypsy dance costume
Gypsy dance costume ছবি : সংগৃহীত

জিপসিরা জীবনধারণের জন্য মূলত ব্যবসা করে। বিভিন্ন রকমের প্রাণী, ধাতুর জিনিসপত্র এবং গৃহস্থালি জিনিসপত্রের ব্যবসাই সাধারণত করতে দেখা যায় এদের। তবে এরা গান এবং বিভিন্ন বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেও টাকা আয় করে থাকে।

জিপসিরা অত্যন্ত অবহেলিত একটি গোষ্ঠী। তবে তাদের মানবাধিকার রক্ষা এবং উন্নয়নের জন্য বর্তমানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল রোমানি ইউনিয়ন। প্রতি বছর ৮ এপ্রিল ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ দ্য রোমা’ পালন করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন