খাবার ভালো রাখতে আমরা ফ্রিজে খাবার রাখি। ব্যস্ততার জীবনে একবার রান্না করে কয়েকবার খাওয়ার অভ্যাসও আমাদের তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি, ফ্রিজে খাবার রাখলে খাবার ভালো থাকে। কিন্তু আসলেই কি তাই?
অনেক খাবার ফ্রিজে রাখলে এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। কিছু কিছু খাবার আবার ফ্রিজে রাখা একেবারেই নিষিদ্ধ। তাই শুধু খাবার খাওয়া নয়, খাবারের সঠিক গুনাগুন অক্ষুন্ন রাখতে ঐসব খাবার ফ্রিজে রাখবেন না। চলুন দেখে নিই তেমনই কিছু খাবার, যা ফ্রিজে রাখা ঠিক নয়।
১. তরমুজ
তরমুজ ঠান্ডা তাপমাত্রায় রাখলে এই পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। শুকিয়ে যায় ভিতরের পানি। একবার তরমুজ কেটে সর্বোচ্চ দুইদিন ফ্রিজে রাখা যেতে পারে। এর বেশিক্ষণ ফ্রিজে তরমুজ রাখা ঠিক নয়।
২. আলু
আলু কখনও ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন নেই। আলো থেকে দূরে এবং না ধুয়েই আলু সংরক্ষণ করতে হয়। ঠান্ডা তাপমাত্রা বা ফ্রিজে রাখলে আলুতে থাকা শ্বেতসার সুগারে পরিণত হয়। এতে রান্নার সময় আলুর রঙ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ভুলেও আলু ফ্রিজে রাখবেন না।
৩. মধু
মধু স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ভালো থাকে। ফ্রিজে রাখলে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই মধু ফ্রিজে না রাখে সূর্যের আলো থেকে দূরে পাত্রের মুখ ভালোভাবে আটকে রাখুন।
৪. কফি
অতিরিক্ত ঠান্ডা কফির মধ্যে থাকা আদ্রতা কমিয়ে দেয়। ফলে কফির স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তাই কফির বোতল বা প্যাকেট ফ্রিজে রাখবেন না।
৫. টমেটো
টমেটো স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ভালো থাকে। কম তাপমাত্রা বা ফ্রিজে টমেটো রাখলে টমেটোর উপকারিতা ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তবে যদি টমেটো পুরোপুরি পেকে যায় তাহলে প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে ফ্রিজে রাখতে পারেন। ফ্রিজ থেকে বের করে আধা ঘন্টা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে এরপর রান্না করুন।
৬. পেঁয়াজ
খোসাযুক্ত পেঁয়াজ ফ্রিজে রাখলে অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে সেটি পঁচে যায়। কারণ এধরণের পেঁয়াজ ভালো থাকতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের। ফ্রিজে পেঁয়াজ রাখলে এর মধ্যে থাকা উপাদানের মধ্যে বিক্রিয়া হয়ে খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই ফ্রিজে না রেখে খোলা জায়গা অথবা ছিদ্রযুক্ত কাগজের ব্যাগে ভরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন।
৭. রসুন
ঠান্ডা জায়গায় রাখলে রসুনের আয়ু কমে যায় ও স্বাদ নষ্ট হতে শুরু করে। ফ্রিজে না রেখে এটি শুকনো ও শীতল জায়গায় সংরক্ষণ করতে পারেন।
৮. হট সস
হট বা স্পাইসি সসকে ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। এতে প্রচুর ভিনেগার থাকে যা ব্যাকটেরিয়া জন্মানো প্রতিরোধ করে। স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই সসের উপাদান ভালো থাকে।
৯. পাঁউরুটি
অনেকে ফ্রিজে পাঁউরুটি সংরক্ষণ করেন। কিন্তু এতে পাঁউরুটি শক্ত ও রাবারের মতো হয়ে যায়। একইসঙ্গে এর গুনাগুন ও স্বাদ খারাপ হয়ে যায়। তাই ফ্রিজে না রেখে বাক্সে রাখতে পারেন।
১০. বাদাম
ফ্রিজে বাদার রাখলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়। অতিরিক্ত ঠান্ডায় বাদামের স্বাদ ও গন্ধ নষ্ট হয়। এছাড়া বাদামের মুচমুচে ভাবও নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফ্রিজে না রেখে বাদাম বায়ুরোধী পাত্রে খোলা জায়গায় রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন।
১১. মশলা
অনেকে মনে করেন ফ্রিজে মশলা রাখতে সেটি ভালো থাকে। তবে এটি ঠিক নয়। কারণ ঠান্ডা জায়গায় রাখলে এর ভিতরে থাকা ভোলাটাইল তেল শুকিয়ে যায়। ফলে স্বাদ কমতে শুরু করে।
১২. লেবু
লেবু ফ্রিজে রাখলে কয়েকদিনের মধ্যে শুকিয়ে যায়। একইসাথে এর উপাদানের কার্যকারিতাও কমতে শুরু করে। তাই লেবুকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা উচিত।
১৩. পুদিনা পাতা
অনেকে পুদিনা পাতা ফ্রিজে রাখেন। এতে পুদিনা পাতা দ্রুত নষ্ট হয় এবং শুষ্ক হয়ে যায়। ফ্রিজে না রেখে পানিভর্তি জারের ভিতরে মুখ খোলা রেখে পুদিনা পাতা সংরক্ষণ করা যায়।
১৪. অলিভ অয়েল
কোনও ধরণের তেল ফ্রিজে রাখা উচিত না। এতে তেল জমে এবং শক্ত হয়ে যেতে পারে। এতে তেলের গুনাগুন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই অলিভ অয়েলসহ অন্যান্য তেল শীতল জায়গায় সংরক্ষণ ও তাপ থেকে দূরে রাখুন।
১৫. আপেল
আমরা প্রায় সবাই আপেল ফ্রিজে রেখে খাই। কিন্তু এক অথবা দুই সপ্তাহের মধ্যে খেলে আপেলকে ফ্রিজে রাখা ঠিক না। এর চেয়ে বেশি রাখলে তখন ফ্রিজে রাখা যেতে পারে।