স্বর্গ শব্দটি শুনলেই আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, শান্তিময় কোন জায়গার দৃশ্য কল্পনা করি। পৃথিবীর এমন কিছু স্থান আছে, যে স্থানগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতো বেশি যে, মানুষ সেই স্থানগুলোকে স্বর্গের সাথে তুলনা করতে দ্বিধাবোধ করে না।
হাওয়াই-এর একটি দ্বীপ ওহায়ুতে একটি স্থান আছে যার নাম ‘হাইকু স্টেয়ারস (Haiku Stairs)।’ জায়গাটির নাম হাইকু স্টেয়ারস হলেও সিঁড়ির চূড়ায় উঠে মেঘের ভিতর থেকে দেখতে পাওয়া অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য জায়গাটিকে বলা হয় স্টেয়ারওয়ে টু হেভেন (stairway to Heaven) অর্থাৎ স্বর্গ পথের সিঁড়ি।
১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনী হাইকু রেডিও স্টেশন (যা গুপ্তভাবে সমগ্র প্যাসিফিকের নৌবাহিনীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম) নির্মাণের জন্য ওহায়ু-এর কুওলাউ পাহাড়ের (ko’olau mountain) গা ঘেঁষে মই বসাতে থাকে। পরবর্তীতে চলাচলের সুবিধার জন্য মইয়ের পরিবর্তে ৩ হাজার ২২২ টি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়।
ভূমি থেকে ৩ হাজার ২২২ টি সিঁড়ি বেয়ে উঠাটা অনেক বেশি কষ্টকর হলেও পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেঘের ফাঁক গলে অতোটা উঁচু থেকে আকাশের সাথে ওহায়ু দ্বীপের মিলনরেখা ও আর পুরো দ্বীপটির দেখে মেলে তা মানুষের সকল ধকল মিটিয়ে দেয়।
প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ হাইকু সিঁড়িগুলো হাইক করে শুধু এ নয়নাভিরাম দৃশ্য একবার উপভোগের জন্য। তবে পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি হাইক করে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখার জন্য। অসম্ভব সুন্দর এ দৃশ্য দেখার জন্য সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে সাত ঘণ্টা সময় লাগে।
স্টিলের রেলিং ঘেরা কাঠের সিঁড়িগুলো প্রায় সময়ই কুয়াশায় ভেজা থাকে। তাই পিছলে পড়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকায়, হাইকু রেডিও স্টেশনটি ও হাইকু স্টেয়ারস বেয়ে উঠানামা সর্বসাধারণের জন্য ১৯৮৭ সালে আইনতভাবে নিষিদ্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীতে স্বর্গের স্বাদ পাওয়ার জন্য প্রতি বছর শত শত মানুষ এই আইন ভঙ্গ করে এই সিঁড়িতে হাইকিং করছেন। পর্যটকদের আগ্রহের কারনে ২০০৩ সালে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ডলার খরচ করে সিঁড়িগুলোকে নতুন করে পুনরায় নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবল ঝড়ে সিঁড়িগুলো ভেঙ্গে যায়। এবং তা হাইকিংয়ের জন্য পুরোপুরি অযোগ্য হয়ে পড়ে।
খুব মন খারাপের কিছু নেই এ খবরে কারন এছাড়াও জাপানের অকিনাওয়াতে, স্পেনের অ্যান্ডোরা ও গ্রিসের স্যান্তোরিনিতে এমন বেশকিছু সিঁড়ি রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য যা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘স্টেয়ার টু হেভেন’ নামে পরিচিত। আপাতত এ জায়গাগুলো ঘুরে আসা যেতে পারে।