দাবা খেলার উৎপত্তি

প্রকাশের তারিখ:

বিখ্যাত দাবাড়ু মার্সেল ডুচ্যাম্প বলেছেন, সমস্ত শিল্পী দাবা খেলোয়াড় না হলেও, সমস্ত দাবা খেলোয়াড়ই শিল্পী।

পদাতিক বাহিনী ক্রমশই অগ্রসর হচ্ছে। হাতিরাও এরমধ্যেই প্রতিরক্ষা ভেঙে ফেলেছে। রাজা পিছু হটার চেষ্টা করছেন, কিন্তু শত্রু সৈন্য তাকে ঘিরে ফেলেছে! পালিয়ে যাওয়া যেখানে অসম্ভব!

এটা শুধু একটা সত্যিকারের যুদ্ধই নয়, আবার শুধু এটাকে একটা খেলাও বলা যায় না।

দাবা খেলতে শারীরিক পরিশ্রম না হলেও এ খেলায় জিততে প্রয়োজন হয় প্রখর বুদ্ধি ও মনোযোগের। প্রায় দেড় হাজার বছর পুরনো এ খেলার ইতিহাস সম্পর্কে জানব আজকের বিশ্লেষণে।

খেলাটির উৎপত্তি ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে ভারতে। গুপ্ত সাম্রাজ্যের সবচেয়ে ছোট রাজকুমার এক যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করলে তার ভাই সেই মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করতেই একটি ৮ গুন ৮ এর একটি ছক আঁকলেন। তারপর একে একে সৈন্যদের, হাতীর এবং রাজার অবস্থান আঁকলেন। সেদিন থেকে প্রচলন হল নতুন একটি খেলা যার নাম দেয়া হল চতুরঙ্গ। সংস্কৃত এই শব্দটির অর্থ চার ভাগ।

পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে খেলাটি ছড়িয়ে পড়ে পারস্য সাম্রাজ্য অর্থাৎ বর্তমান ইরান পর্যন্ত। এরপর দাবা খেলা আসে দক্ষিণ ইউরোপে। সবশেষ ইউরোপ থেকেই প্রাচীন দাবা মূলত আজকের দাবায় রূপ নেয়। প্রাচীনকালে দাবাখেলায় শুধু রাজা থাকতেন। তবে এখন এই খেলায় একজন রানীও আছেন।

ব্রিটিশ বণিকদের ভুল উচ্চারণে পরবর্তীতে ‘চেস’ শব্দটির উদ্ভব হয়। ইংরেজি শব্দ chess এর উদ্ভব হয়েছে পারসিয়ান শব্দ shah থেকে বাংলায় যার অর্থ রাজা । এবং ‘checkmate’ এর উদ্ভব হয়েছে ‘shah mat’ থেকে যার অর্থ রাজা অসহায়।

১১শতকে দাবা খেলা হয়ে ওঠে রাজদরবারের আইনশিক্ষার অংশ।

মূলত ১২০০ থেকে ১৪৭৫ সালের মধ্যবর্তী সময়েই দাবার নিয়মকানুনে মূল পরিবর্তন আসে। রাজদরবার থেকে সেই খেলা পৌঁছে যায় কফিহাইউজেও। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে টাকার জন্য দাবা খেলার পরিমাণ এত বেড়ে যায় যে ১২৫৪ সালে নবম লুইস এর বিরুদ্ধে একটা অধ্যাদেশ জারি করেন। আধুনিক দাবার প্রথম টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৮৫১ সালে। যার জনক উইলহেম স্টেইনজ। লন্ডনে অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্টটি আয়োজন করেন ব্রিটিশ দাবাড়ু হাওয়ার্ডস স্ট্যাউনটন। টুর্নামেন্টটিতে চ্যাম্পিয়ন হন জার্মানির অ্যাডলফ অ্যান্ডারসেন। দাবায় সময়ের হিসাব শুরু হয় ১৮৮৩ থেকে। ১৮৮৬ সালে প্রথম বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ হয়।

বিংশ শতাব্দীতে গঠিত হয় ওয়ার্ল্ড চেস ফেডারেশন বা সংক্ষেপে এফআইডিই। একবিংশ শতাব্দীতে দাবায় কম্পিউটার ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭০ সালে প্রথম কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করা একটি গেইম বাজারে ছাড়া হয়। এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার পর অনলাইনে দাবা খেলা শুরু হয় ১৯০০ সালের মধ্যভাগে।
দাবার আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্থাৎ ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল চেস ফেডারেশন’ এর প্রতিষ্ঠা হয় প্যারিসে। ১৯২৪ সালের ২০ জুলাই। ২০ জুলাই আন্তর্জাতিক দাবা দিবস। ১৯৬৬ থেকে প্রতিবছর এই দিনটি পালিত হয়।

সূত্র: দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন

শেয়ার করুন:

সাবস্ক্রাইব

জনপ্রিয়

এ সম্পর্কিত আরও কিছু পোস্ট
Related

ইনিংস ব্যবধানে বাংলাদেশের জয়

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ইনিংস ব‌্যবধানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।...

বীরের বেশে দেশে ফিরল বিশ্বজয়ীরা

বীরের বেশে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। যুব বিশ্বকাপে...

কী কারণে বাংলাদেশের জয়টা ঐতিহাসিক?

রবিবার (৩ নভেম্বর) ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।...

নিষেধাজ্ঞার পর এমসিসি কমিটি ছাড়লেন সাকিব

ফিক্সিংয়ের তথ্য গোপন করার দায়ে মঙ্গলবার সাকিবকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা...