বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ছে। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণত মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে।
বজ্রপাত কী?
ভূমি থেকে উত্তপ্ত বায়ু হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। উপরে উঠে এই বায়ু ঠাণ্ডা হয় এবং ধীরে ধীরে জমতে জমতে তা মেঘ সৃষ্টি করে। এই মেঘ ক্রমাগত আকারে বাড়তে থাকে। এই মেঘের কণাগুলো ক্রমাগত একে অপরের সাথে ধাক্কা খায় যার ফলে উৎপন্ন হয় চার্জ বা আধান।
হালকা হওয়ায় মেঘের উপরের দিকে থাকে ধনাত্মক আধান আর ভারী বলে নিচের দিকে জমা হয় ঋণাত্মক আধান। বিপরীতমুখী এই ধনাত্মক আর ঋণাত্মক আধান পরস্পরের সংস্পর্শে আসলে এদের বিভব পার্থক্যের কারণে উপর থেকে নিচের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন ঘটে। এর ফলে শক্তির নিঃসরণ ঘটে এবং আলোর ঝলকানি সৃষ্টি হয়।
যদিও বজ্রপাত প্রতিরোধের উপায় নাই, তবে প্রাণহানি কমাতে কয়েকটি বিষয় করণীয় রয়েছে। আসুন জেনে নিই বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে ও বজ্রপাতের সময় করণীয় বিষয়গুলো।
১. মূলত আকাশে ঘনকালো মেঘ দেখা দিলে বজ্রপাতের আশংকা তৈরি হয়। ৩০-৪৫ মিনিট বজ্রপাত স্থায়ী হয়, এ সময়ে ঘরে বাইরে না যাওয়াই ভালো।
২. বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে বাইরের যাওয়ার প্রয়োজন হলে রাবারের জুতা পায়ে দিয়ে বের হওয়া যেতে পারে।
৩. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ বা উঁচু স্থানে থাকবেন না।
৪. এ সময়ে ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে, কানে আঙুল দিয়ে, মাথা নিচু করে বসে পড়তে হবে।
৫. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। টিনের ঘর এড়িয়ে চলাই ভালো।
৬. বজ্রপাতের সময় উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকুন।
৭. বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে যাতে শরীরের সঙ্গে না লেগে থাকে সেটি নিশ্চিত হবেন। সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
৮. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে অবস্থান করলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকবেন না।
৯. বাড়ির জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভিতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।
১০. মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলো বন্ধ রাখুন।
১১. এ সময়ে ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে প্লাস্টিকের অথবা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে পারেন।
১২. খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত থাকুন।
১৩. বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাবেন না, তবে এ সময় নদীতে থাকলে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।
১৪. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
১৫. প্রতিটি ভবনে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।
১৬. পানি বিদুৎ পরিবাহী, তাই এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় নদী, জলাশয় বা জলাবদ্ধ স্থান থেকে সরে যেতে হবে।
১৭. যদি বুঝতে পারেন যে বজ্রপাত হতে যাচ্ছে তাহলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসুন এবং চোখ বন্ধ রাখুন। তবে শুয়ে পড়বেন না।