এখানে পা হড়কালেই বিপদ !

সমুদ্রের পাড়ে খেলতে গিয়ে মাঝে মাঝেই তীরের বালিতে আমাদের পা বসে যায়। মাঝে মাঝে এটি এতো দ্রুত কাজ করে ফেলে যে কিছু বুঝে উঠার আগেই হাঁটু পর্যন্ত বালিতে বসে যায়। এমনও হয়, তুমি সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হাঁটছো, হঠাৎ করেই নরম বালিতে তোমার পা আটকে গেলো। তুমি পা ছোটানোর জন্যে তাড়াহুড়া করতে লাগলে, কিন্তু যত বেশি নাড়াচ্ছো, বালির আস্তরণ তত বেশি শক্তি করে তোমাকে ভেতরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 

এরকম অনেকগুলো ঘটনা আমরা দেখি, এর চেয়ে অনেক ভয়ঙ্কর ঘটনাও হয়। পুরোপুরি ডুবে গিয়ে মারা যাওয়া, কিংবা শরীরের অর্ধেক ঢুকে যাওয়ার পর চারপাশের চাপের কারণে মারা যাওয়ার ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটছে। 

প্রকৃতির এই ভয়ঙ্কর অংশটির নাম চোরাবালি। সহজ কথায়, যে জমাট বাঁধা মাটি বা বালির ঢিবি একটানা পানি প্রবাহের কারণে ভার বহন করার শক্তি হারিয়ে ফেলে তারই নাম চোরাবালি।

বিশদভাবে ব্যাখ্যা করলে ব্যাপারটা এমন হয়, বালি বা পলি জাতীয় পদার্থ, মাটি ও নোনাপানির কলয়েডীয় মিশ্রণ দেখতে কঠিন লাগলেও সামান্য পরিমাণ চাপের বৃদ্ধিতে প্রথমে সে স্থানের সান্দ্রতা কমে গিয়ে তরলীকরণ ঘটে, অতঃপর চারিদিকে কলয়েডের দানার ঘনীভবন ঘটে এবং সান্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। তখনই চোরাবালির উপরের বস্তুটি ভেতরের দিকে যেতে থাকে।

সমুদ্রের পাড়ে পানির ক্রমাগত আসা যাওয়া চলতেই থাকে। এই একটানা আসা যাওয়ার পথে বালুকণার সাথে বারবার ঘর্ষণের কারণে কণাগুলোর মধ্যবর্তী আন্তঃআণবিক ফাঁক ধীরে ধীরে বেড়ে যায়। এ কারণে সে স্থানের বালির ঘনত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। এভাবে সৃষ্টি হয় চোরাবালি।

অনেকের ধারণা শুধু বালি থাকলেই চোরাবালি সৃষ্টি হুতে পারে। কিন্তু না, এ ধারণা ভুল। মরুভুমির বিশাল বালিরাশির মাঝে সিনেমার পর্দায় চোরাবালি পাওয়া গেলেও বাস্তবে কোনো চোরাবালি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ, সেখানে পানির কোনো চলমান ধারা নেই, যা সে স্থানের বালির উপর কোনো প্রভাব ফেলবে। 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুকনো পাতা, ঘাস এগুলোর নিচে ঢাকা পড়ে থাকে চোরাবালি। কিছু কিছু স্থানে চোরাবালির গভীরতা খুবই ভয়ঙ্কর থাকে। সেগুলোতে আটকা পড়লে অন্য কারো সহযোগিতা ছাড়া বেঁচে ফেরত আসা একরকম অসম্ভব।

চোরাবালিতে আটকে পড়ে মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন জন্তু জানোয়ার, এমনকি আস্ত রেলের বগি পর্যন্ত তলিয়ে গিয়েছিলো ! 

জুরাসিক পার্ক ছবিটির কথা মনে আছে ? অনেকগুলো বড় বড় ডায়নাসোর দেখানো হয় এখানে। সবাই বলে লক্ষ লক্ষ বছর আগে ডায়নাসোর বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তাহলে এতো আগের ডায়নাসোর সম্পর্কে আমরা জানলাম কি করে ?

শুধু ডায়নাসোরই না, অনেক আগের প্রাণী কিংবা বিভিন্ন জন্তু জানোয়ারের সম্পর্কে জানা যায় শুধুমাত্র এদের ফসিল বা জীবাশ্ম থেকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রাণী বা জন্তুগুলো চোরাবালিতে আটকে গিয়ে মারা যেতো এবং তলিয়ে যেতো। এই চোরাবালি শুকিয়ে, দীর্ঘদিন পর পাথরে পরিণত হয়। আর সেই পাথরগুলোর ভেতর থেকে আজও আবিষ্কার হচ্ছে নানা জন্তুর ফসিল। 

 

           

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন