বক্সিং ডে টেস্ট!

বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে এলেই আমরা ‌'বক্সিং ডে' কথাটা শুনি। এই বক্সিং কিন্তু মারামারি বা ঘুষােঘুষির বক্সিং না। বড়দিনের পরের দিন অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বরকে বক্সিং ডে বলা হয়। কমনওয়েলথভূক্ত কিছু দেশ এবং পশ্চিমা বিশ্বের কিছু দেশে এদিন সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।

প্রাচীন সনাতনী রীতি-নীতি অনুযায়ী বক্সিং ডে'তে শ্রমিক, চাকর বা চাকুরিজীবীরা তাদের মালিক বা বসের কাছ থেকে নতুন উপহার পেয়ে থাকেন। এই উপহার তাদেরকে দেয়া হয় বিশেষ 'ক্রিসমাস বক্সে'। একারণে বক্সিং ডে তাদের জন্য খুব বিশেষ একটা দিন ।

বক্সিং ডের সঙ্গে বক্সিং খেলাটির কোনো সম্পর্ক না থাকলেও সম্পর্ক আছে ক্রিকেট, ফুটবল, রাগবি, হকি, ঘোড়দৌড়, হান্টিংসহ অন্যান্য বেশ কিছু খেলার। তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বক্সিং ডে টেস্টের জন্য এর গুরুত্বই আলাদা।

১৯৫০ সাল থেকে এই দিনটিতে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রদেশের মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল ও সেই গ্রীষ্মে অস্ট্রেলিয়া সফরে থাকা অন্য একটি দেশের ক্রিকেট দল একটি টেস্ট ম্যাচে অংশ নেয়। এর আগে বক্সিং ডেতে ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্যে শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতো।

বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ দেখতে অনেক ক্রিকেটপ্রেমী দর্শক এমসিজিতে ভিড় জমান। তবে মাঝে ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এই খেলা বন্ধ ছিল। ১৯৮০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে প্রতি বছর ২৬ শে ডিসেম্বর খেলা টেস্ট ম্যাচ ‌'বক্সিং ডে টেস্ট' হিসেবে গন্য করা হয়। যা এখন প্রচলিত রীতি-নীতিতে পরিণত হয়েছে।

১৯৮৯ সালে টেস্ট ম্যাচের পরিবর্তে ওয়ানডে খেলার আয়োজন করা হয়। যাতে অস্ট্রেলিয়া ৩০ রানে শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করে। এ বছরের আগ পর্যন্ত ৩৮টি বক্সিং ডে টেস্ট খেলে অস্ট্রেলিয়া ২২টিতে জয়লাভ করে, ৮টিতে পরাজিত হয় এবং ৮টি ম্যাচ ড্র হয়।

এ বছর অস্ট্রেলিয়া ভারতীয় ক্রিকেট দলকে বক্সিং ডের আতিথ্য দিচ্ছে। ২৬ ডিসেম্বর তারা তৃতীয় টেস্ট খেলতে মাঠে নামবে তারা। ৪ ম্যাচের এই সিরিজে ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়া ২-০ তে এগিয়ে আছে। অন্য সময়ে যে দলের সাথেই খেলা হোক, প্রতি চার বছর পরপর বক্সিং ডে টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এমসিজিতে নামে অস্ট্রেলিয়া। যা পাঁচ-ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজের অংশ হিসেবে গণ্য হয়।

শুধু অস্ট্রেলিয়াই নয় অন্যান্য দেশ যেমন নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা দলও বক্সিং ডেতে খেলার আয়োজন করা শুরু করেছে এখন। নিউজিল্যান্ড ওয়েলিংটন ব্যাসিন রিজার্ভে আগে টেস্ট খেলত। কিন্তু তারা এখন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ক্রিকেটের শর্টার ভার্সনের (টি-টুয়েন্টি বা ওয়ানডে) দিকে ঝুঁকেছে। তবে ডারবানের সাহারা স্টেডিয়াম কিংসমিডে দক্ষিণ আফ্রিকা দল নিয়মিতই টেস্ট খেলছে এখন।

ছুটির দিনের দর্শকদের আনন্দ দিতে এ দিন পুরোদমে চলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইপিএল)। ইপিএলে এই দিনে প্রায় ২০টি দলের খেলা থাকে। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডে, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে জনপ্রিয় ঘোড়দৌড়ের পাশাপাশি চলে রাগবি বা আইস হকি লিগের খেলাগুলোও।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন