স্কুলের হোমওয়ার্ক করতে না চাইলে

কেজি টুয়ে পড়ে রাফিন। সে যথেষ্ট মেধাবী। কিন্তু স্কুলের হোমওয়ার্কের কথা শুনলেই তার মনে গায়ে জ্বর আসে। রাফিন কখনোই হোমওয়ার্ক নিয়মিত করে না। প্রায়ই ডায়রিতে হোমওয়ার্ক না করার অভিযোগ মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরে সে।

বাসায় হোমওয়ার্ক করাতে বসালেও কিছুক্ষণ পরপরই দৌড়ে উঠে যায়। দুই বিষয়ের হোমওয়ার্ক শেষ না হতেই হাঁপিয়ে ওঠে সে। মাঝেমাঝে আবার হোমওয়ার্ক শেষ করার জন্য নানা চাহিদা পূরণের আবদার নিয়ে হাজির হয়। এমন অভিযোগ রাকিনের মায়ের।

স্কুলের হোমওয়ার্ক না করার প্রবনতা কমবেশি প্রায় সব শিশুর মধ্যেই দেখা যায়। এর পেছনে অবশ্য যৌক্তিক কারণও রয়েছে। প্রতিটি শিশুই স্কুল শেষে বাড়ি ফেরে একগাদা হোমওয়ার্কের বোঝা মাথায় নিয়ে। এতে করে প্রতিটি প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভেতরই লেখাপড়ার প্রতি এক ধরনের অনীহা তৈরি হচ্ছে।

অন্যদিকে অভিভাবকরাও বাচ্চাদের হোমওয়ার্ক শেষ করার জন্য ক্রমাগত চাপ দিতে থাকেন। করতে না চাইলে বকাঝকাও করেন। শিশুরা কোনকিছু করতে না চাইলে কখনোই তাকে বকাঝকা করা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে তাকে বুঝিয়ে কাজ করাতে হবে।

ব্যস্ত নাগরিক জীবনের ইঁদুর দৌড়ে নিজের সন্তানটি যেনো পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য বাবা-মারাও সন্তানের হোমওয়ার্ক শেষ করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যান। সবার থেকে নিজের সন্তানটির এগিয়ে থাকা চাই-ই চাই। আর বাবা-মার ইচ্ছার মূল্য দিতে গিয়ে বিরুপ প্রভাব পড়ে শিশুর মানসিক বিকাশে।

শিশুর বিকাশের এই সময়টিতে কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয় তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক

০ এই বয়সি বাচ্চারা ভালো-মন্দ সহজে বুঝে উঠতে পারে না। এজন্য ওদেরকে এ দুইয়ের পার্থক্য বুঝে উঠতে সময় দিন। মাথায় রাখুন ওর মধ্যে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি হতে একটু সময় প্রয়োজন।

০ প্রথম ক্লাসেই আপনার সন্তানকে খুব ভালো করতে হবে এমনটা সবসময় চাইবেন না। এতে ওর মধ্যে চাপ তৈরি হবে। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

০ বইয়ের প্রতি যেন শিশুর আগ্রহ তৈরি হয় তার চেষ্টা করুন।

০ প্রতিদিন নিদির্ষ্ট সময়ে যে তার হোমওয়ার্ক বা বাড়ির কাজ শেষ করতে হবে এমন নয়। বরং একেকদিন ওর ইচ্ছা অনুযায়ী দিনের বিভিন্ন সময়ে হোমওয়ার্ক শেষ করতে উৎসাহিত করুন।

০ সব হোমওয়ার্ক শেষ করার জন্য একটানা ওকে বসিয়ে রাখবেন না। শিশুরা সাধারণত ছটফটে স্বভাবের হয়। তাই ওকে মাঝে মাঝে উঠতে দিতে হবে। তা না হলে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলবে সে।

০ পড়ালেখা বিষয়টি যে বিরক্তির নয় বরং আনন্দেরও এই বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলুন।

০ সন্তান যখনই পড়তে বসবে তখনই তাকে উৎসাহিত করুন। এতে সে এমনিতেই বইয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। এভাবে কিছুদিন চলার এরপর থেকে আর হোমওয়ার্ক করার জন্য জোরাজুরি করতে হবে না।  

০ ঠিকঠাক মতো হোমওয়ার্ক শেষ করলত পারলে ওকে মাঝেমধ্যে উপহার দিন। কেন তাকে উপহার দিলেন সেই বিয়য়টি বুঝিয়ে বলুন। এতে আপনার সন্তান ভবিষ্যতে হোমওয়ার্কের প্রতি আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে।

০ হোমওয়ার্ক করার সময় শিশুর মনোযোগ এদিক ওদিক যাবেই। এ সময় বকাঝকা না করে ধৈয্য নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে।

০ বাচ্চার হোমওয়ার্ক শেষ না করা পর্যন্ত রেগে থাকবেন না। চেষ্টা করুন হাসি মুখে হোমওয়ার্কগুলো শেষ করতে।

০ হোমওয়ার্ক করার জন্য অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে ওকে তুলনা করবেন না। এতে সে অন্যদের তুলনায় নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করবে।

০ যে বিষয়টির প্রতি শিশু বেশি আগ্রহী সেই বিষয়ের হোমওয়ার্ক আগে শেষ করতে বলুন। এতে করে অন্য বিষয়গুলোর হোমওয়ার্ক শেষ করতে শিশু মনোযোগি হবে।

০ বাচ্চারা অনেক সময় হোমওয়ার্ক শেষ করার অজুহাত দেখিয়ে কিছু চেয়ে বসতে পারে। এটা কখনোই প্রশ্রয় দেবেন না।

০ হোমওয়ার্ক করার প্রতি আগ্রহ দিন দিন কমে যেতে দেখলে একজন মনোবিদের কাছে নিয়ে যেতে পারেন সন্তানকে।

০ মনে রাখবেন সব শিশুর পারদশির্তা এক রকম নয় এটা মাথায় রাখুন। চেষ্টায় সব হয়। তবে সেই চেষ্টায় থাকতে হবে ধৈয্য এবং আন্তরিকতা। প্রতিটি শিশুই অসীম সম্ভাবনার একেকটি আধার। আন্তরিক প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা এবং উপযুক্ত গাইডের মাধ্যমেই শিশুর মধ্যে থাকা সেই অমিত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন