লেকের মাঝখানে এক বিশাল প্রাসাদ। আর লেকের চারপাশ পাহাড়ে ঘেরা। তাই প্রাসাদে যেতে হলে নৌযান ব্যবহার করতে হবে। প্রাসাদটির দেখতে এক তলা মনে হলেও পানির নিচে তলিয়ে থাকে চার তলা। এই প্রাসাদটি হলো জলমহল বা জলের প্রাসাদ।
১৫৯৬ সালে রাজা মান সিংয়ের তৈরি করা লেকের মধ্যে এই প্রাসাদটি তৈরি করা হয়। উদ্দেশ্য ছিলো হাঁস শিকার করা। প্রাসাদ বলা হলেও এখানে থাকার সুবিধা নেই, তবে বিশাল চত্বর রয়েছে। আর ছাদে রয়েছে বিশাল চারকোনা ছাতা। সেখানে বসে আশেপাশের অপরুপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। আর রয়েছে বাঁকানো সিড়িসহ বাগান।
ভারতের রাজস্থানের পিংক সিটিতে অবস্থিত এই জলমহলটি মান সাগর লেকের মাঝখানে অবস্থিত। এলাকার মানুষের পানির সংকট দূর করতেই এই লেকটি তৈরি করা হয়। ১৮ শতকে জলমহলটি নতুনভাবে সাজানো হয় এবং লেকের আকার বড় করা হয়। পরে এই প্রাসাদের মালিকানা পান মহারাজ মাধো সিংয়ের ছেলে দ্বিতীয় মাধো সিং। তিনি প্রসাদের সাথে একটি বিচারালয় যোগ করেন।
ছলমহলটির নিচের তলাগুলোতে গেলে রাজপুত ও মোঘল এই দুই ঘরানার শিল্পের দুর্লভ ছোঁয়ার দেখা পাওয়া যায়।
কিন্তু একসময় স্থানীয় শাসকদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে এই প্রাসাদ। ফলে অনাদর-অবহেলায় নষ্ট হতে থাকে এর সৌন্দর্য। আর আশেপাশে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক আর গৃহস্থালির আবর্জনা এসে জড়ো হতে থাকে পানিতে। বিকট গন্ধের কারণে একসময় পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দৃষ্টির আড়ালে চলে যায় জলমহল। পরের ২০০ বছরের বেশি সময় অবহেলিতই থাকে জলমহল আর মান সাগর।
২০০৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থাকে জলমহল ও মান সাগর লেকের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়। পানি পরিস্কার করা হয়। আগের রূপে ফিরে আসে জলমহল ও মান সাগরের। যদিও এখনও পর্যটকদের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হয়নি। তাই দূর থেকে দেখতে হবে পরিস্কার পানির মাঝখানে থাকা এই অপরূপ নিদর্শন।